বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদর্শ ও অধিকার
১১

(১.১১)। মহাভারতে অনেক স্থলে নারীদের এই অধিকার স্বীকৃত হয় নাই। স্বামীর সেবা ছাড়া যাগযজ্ঞ বা শ্রাদ্ধ-উপবাস নারীদের নাই।[] অথচ কুন্তী বলিতেছেন, আমি যথাবিধি সোমপান করিয়াছি।[] তাহাতেই মনে হয়, যজ্ঞে সোমের অধিকার তখনও নারীদের ছিল। রামায়ণেও দেখা যায়, কৌশল্যা ছিলেন দশরথের যজ্ঞাংশভাগিনী। মহাভারতে (অশ্ব ৮৯. ২) দেখা যায়, ব্রাহ্মণেরা বিধিবৎ রাজসূয় যজ্ঞে অশ্ব সমানয়ন করিয়া দ্রুপদাত্মজাকে সেখানে যজ্ঞকর্মের জন্য বসাইলেন। মহাভারত এই কথাও বলেন, ধর্ম দারারই অধীন।[] রামায়ণে (সুন্দর ১৪.৪৯) দেখা যায়, জানকী নিয়মিত সন্ধ্যাবন্দনাদির জন্য নদীর তীরে আসিতেন। এখানে টীকাকার রামায়ণতিলকে তর্ক তুলিতেছেন যে, নারী তো বৈদিকমন্ত্র উচ্চারণ করিবেন না, তবে বাকি কাজ করিতে পারেন। মূলে কিন্তু এইসব আপত্তি দেখা যায় না। বরং ইহার পূর্বেই কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ডে (২৪. ৩৮) তাঁরা বেদ ও শাস্ত্র প্রমাণে সিদ্ধ করিতেছেন যে, স্বামী ও স্ত্রী অভিন্ন। বালিপত্নী তারা তো মাত্র কপিকুলসম্ভবা। নীতাদেবীর সঙ্গে কি তাঁহার তুলনা। তবু টীকাকার উৎসাহবশে নারীদের বেদাচার অপ্রমাণ করিতে চাহেন, এমনকি সীতাদেবীর কথাপ্রসঙ্গেও। পরমপাবনী নারায়ণী সীতাদেবীকেও এইসব টীকাকারেরা ছোট না করিয়া ছাড়িতে চাহেন নাই। সাধারণ নারীরা আর তাঁহাদের কাছে কতটুকু আশা করিতে পারে?

 প্রাচীনকালে মুনিঋষিরা শুদ্ধ যাগযজ্ঞে নহে লোকশিক্ষার্থ নানাস্থানে ভ্রমণ করিবার সময়েও স্ত্রীদের সঙ্গে লইতেন (মহাভারত, অনু, ৯৩, ২১) মহাভারতের যুগে সভাতেও নারীদের স্থান প্রস্তুত রাখিতে হইত (আদি, ১৩৪, ১১)। কখনও কখনও পরামর্শ দিবার জন্য নারীরা সভাতে আহুতা হইতেন। গান্ধারীকে এইরূপ সভাতে মন্ত্রার্থ আহ্বান করা হইয়াছিল (উদ্যোগ, ৬৭-৬)। দেবী গান্ধারী ছিলেন মহাপ্রজ্ঞা বুদ্ধিমতী ‘আগমাপায়তত্ত্বজ্ঞা’ (আশ্রম, ২৮,৫)। ধর্মপ্রাণা গান্ধারীর আপন পর বলিয়া কোনো সংকীর্ণতা ছিল না। সত্যধর্ম


  1. অনুশাসন, ৪৬. ১৩; ৫৯. ২৯
  2. পীতঃ সোমো যথাবিধি। আশ্রমবাসিক, ১৭. ১৭
  3. দারেষুধীনো ধর্মশ্চ। অশ্বমেধ, ৯০. ৪৮