পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদর্শ ও অধিকার
২১

মহাভারতের উদ্যোগপর্বে ১৩৩ হইতে ১৩৬ পর্যন্ত পুরাপুরি চারটি অধ্যায়ই বিদুলার অগ্নিময়ী বীরবাণীতে ভরা। আপন পুত্রদের বীর্যাভাব দেখিয়া তাঁহার যে বজ্রসার বাণী তাহা চিরদিন সর্বমানবের কর্ণে ধ্বনিত হইতে থাকিবে— আপন আত্মাকে অপমান করিও না, অল্পে আত্মাকে পূর্ণ করিতে যাইও না; ভয় ছাড়, সুমহৎ কল্যাণের জন্য মনকে মুক্ত কর—

মাত্মানমবমন্যস্ব মৈনমল্পেন বীভরঃ।
মনঃ কৃত্বা সুকল্যাণং মা ভৈস্ত্বং প্রতিসংহর। উদ্যোগ ১৩৩, ৭

 কুনদী অল্প জলে ভরিয়া যায়, ইন্দুরের অঞ্জলি অল্পে পূর্ণ হয়, কাপুরুষদের সহজে স্বল্পেই সন্তোষ হয়—

সুপূরা বৈ কুনদিকা সুপূরো মুষিকাঞ্জলিঃ।
সুনন্তোষঃ কাপুরুষঃ স্বল্পকেনৈব তুষ্যতি। উদ্যোগ ১৩৩, ৯

 অতএব কেন বজ্রাহত প্রেতের মত পড়িয়া আছ? হে কাপুরুষ, উঠ, শত্রুনির্জিত হইয়া ঘুমাইয়া থাকিও না— ত্বমেবং প্রেতবচ্ছেষে কস্মাদ্ বজ্রহতো যথা। উত্তিষ্ঠ হে কাপুরুষ মা স্বাপ্পীঃ শত্রুনির্জিতঃ। উদ্যোগ ১৩৩. ১২  হয় আপন বীর্যকে জাগ্রত কর, নয় তো শুভা ও ধ্রুবাগতি (মৃত্যুকে) আলিঙ্গন কর—

উদ্ভাবয়স্ব বীর্যং বা তাং বা গচ্ছ শুভাং গতিম্। উদ্যোগ ১৩৩, ১৮

 মানুষ হও, কেবল সংখ্যাপূর্ণ করিবার মত না-নর বা না-নারী ক্লীবমাত্র হইয়া লাভ কি—

রাশিবর্ধনমাত্রং স নৈব স্ত্রী ন পুনঃ পুমান্। উদ্যোগ ১৩৩, ২৩

অর্থাৎ মানুষের পরিচয় তাহার মনুষ্যত্বে, শুধু সংখ্যাগত আধিক্য অথবা বাহুল্য দিয়া নহে। অংশবিশেষ উদ্ধৃত করার চেষ্টা বৃথা বিড়ম্বনা; আগাগোড়াই পড়িয়া দেখা উচিত। আশ্রমবাসিক-পর্বে (১৬. ২০) মনস্বিনী বিদুলার কথা আবার উল্লিখিত দেখি।

 তাই নারীদের সেই যুগে যেমন সংসারধর্ম তেমনই মানুষোচিত তেজস্বিতা তেমনি জ্ঞান ও ধর্মের সাধনা দেখা যায়। এইসব সাধনার সর্বপথেই মহাভারতের যুগে নারীদের গতিবিধি দেখা যায়। ভীষ্মের দ্বারা নিগৃহীতা কাশীরাজকন্যা অম্বা তপস্যা করিতে বনে গেলেন—

বনং প্রায়াৎ সা কন্যা তপসেবৃতা। উদ্যোগ ১৮৮ ১৫