বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
প্রাচীন ভারতে নারী

বনে আশ্রমবাস করিয়া তিনি কঠোর তপস্যা করিতে প্রবৃত্ত হইলেন (উদ্যোগ ১৮৮. ১৯-২৯)। পুরুষদের মত নারীরাও তখন সংসারধর্ম পালন করিয়া বানপ্রস্থ অবলম্বন করিতে পারিতেন। তাই পুত্রবধূদের লইয়া সত্যবতী বনে গমন করিলেন (আদি ১২৮. ১২)। ইহাদের বহুকাল পরে ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে গান্ধারীও বনে গিয়া শেষজীবনের তপস্যা পূর্ণ করেন (আশ্রমবাসিক ১৫-অধ্যায়)। সত্যভামা প্রভৃতি শ্রীকৃষ্ণের পত্নীগণও বানপ্রস্থ আশ্রয় করিয়াই জীবনকে সার্থক করেন (মৌষল ৭. ৭৪)।

 নারীদের এই তপস্যার অধিকার জৈন ও বৌদ্ধগণের মধ্যেও অব্যাহত ছিল। বৌদ্ধযুগে মহাপ্রজাপতি গোতমী তিস্‌সা মিত্তা ভদ্দা ধীরা উপশমা প্রভৃতি বহু শাক্যনারী প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন। এইসব তপস্বিনীদের কথা ভালো করিয়া জানিতে হইলে থেরীগাথা গ্রন্থখানি দেখিতে হয়।

 জৈনদের মধ্যে এখনও কেহ কেহ সন্ন্যাসিনী হন। তাঁহাদের সাধ্বী বলে। তাঁহাদের পৃথক উপাশ্রয় আছে। আচারাঙ্গ সূত্রে (২. ১. ১-১) ইঁহাদের ‘ভিক্ষুণী’ও বলা হইয়াছে। প্রথম তীর্থংকর ঋষভদেবের সময়ে ব্রাহ্মী ও সুন্দরী নামে দুই ভগ্নী প্রবজ্যা অবলম্বন করেন (জিনসেনকৃত মহাপুরাণ)। চেতকদুহিতা ব্রহ্মচারিণী চন্দনা ছিলেন মহাবীর শিষ্যা এবং ছত্রিশ হাজার ভিক্ষুণীগণমুখ্যা। তীর্থংকর অজিতনাথের তিন লক্ষ বিশ হাজার শিষ্যা ভিক্ষুণী ছিলেন। আরও বহুস্থানে ভিক্ষুণীদের কথা পাওয়া যায়।

 দক্ষিণভারতে অল্‌ৱার ভক্ত নারীদের মধ্যে অণ্ডাল একজন মহাগুরু। উত্তরভারতেও বহু বৈষ্ণব ভক্তনারী হইয়াছেন। মহাপ্রভুর সম্প্রদায়ে হেমলতা ছিলেন একজন প্রখ্যাত গুরু। কবিকর্ণপুর পরমানন্দ তাঁহার শিষ্য। মনস্বিনী গঙ্গা ও জাহ্নবী বহুলোককে ভক্তিশিক্ষা ও দীক্ষা দিয়াছেন।

 তন্ত্রে তো নারীরা দেবী আদ্যাশক্তিরই অংশ, ‘মদংশা যোষিতা মতাঃ’। শ্রীমৎ কৃষ্ণানন্দ তাঁহার তন্ত্রসারে বলেন—

সাধ্বী চৈব সদাচারা গুরুভক্তা জিতেন্দ্রিয়া।
সর্বমন্ত্রার্থতত্ত্বজ্ঞা সুশীলা পূজনে রতা।
গুরুযোগ্যা ভবেৎ সা হি। ১. ৭৪

 স্ত্রীর কাছে দীক্ষা শুভা, মায়ের কাছে দীক্ষার অষ্টগুণফল—

স্ত্রিয়া দীক্ষা শুভা প্রোক্তা মাতুশ্চাষ্টগুণাঃ স্মৃতাঃ। ঐ