মহানির্বাণতন্ত্রে তো স্বয়ং শিব বলিতেছেন— হে আদ্যাশক্তি, জগতে সকল নারী তোমারই স্বরূপ, জগতে তাঁহারা আচ্ছন্ন বিগ্রহ—
তব স্বরূপা রমণী জগত্যাচ্ছন্নাবিগ্রহা। মহানির্বাণ ১০. ৮০
কাদম্বরীতে মহাশ্বেতা সংগীতশাস্ত্রে বিলক্ষণ পারগা। তপস্যার সঙ্গে সংগীতের বিরোধ নাই। নানাপুরাণে ও প্রাচীন সংস্কৃতসাহিত্যে তাহার পরিচয় মিলিবে। অযোধ্যাপতি অজের পত্নী ইন্দুমতী ছিলেন ‘ললিতে কলাবিধৌ প্রিয়শিষ্যা’। মালবিকাগ্নিমিত্র-নাটকে (অঙ্ক ৩) নারীদের নৃত্যের কথা দেখি। মহাদেবের নৃত্যানুকারে ভবানী যে দণ্ডপাদনৃত্য করিয়াছেন, তাহার খবর পাই মম্মটের কাব্যপ্রকাশে। পুরুষের নৃত্য হইল তাণ্ডব। নারীর নৃত্যের নাম লাস্য। জয়দেব ছিলেন নৃত্যকুশলা পদ্মাবতীর ‘চরণচারণচক্রবর্তী’। তবে পদ্মাবতীর কথা বলিতে সাহস হয় না, কারণ নৃত্যই তাঁহার জীবনের সবখানি। কিন্তু সতী বেহুলার নৃত্যের কথা তো তেমন করিয়া উড়াইয়া দিতে পারি না। নৃত্য করিয়াই বেহুলা মৃত পতিকে জিয়াইলেন। বিক্রমোর্বশী- নাটকের চতুর্থ অঙ্কে চিত্রলেখা নৃত্য করিয়াছেন এবং কঠিন কঠিন রাগ-রাগিণীতে গানও করিয়াছেন। সমাজব্যবস্থাপকেরা নারীদের জন্য নৃত্যগীতাদি শাস্ত্রের ব্যবস্থা করিয়াছেন। বৃহস্পতি বলেন, নারীদের জন্য প্রসাধন, নৃত্যগীত-সমাজোৎসবদর্শন বিহিত হইলেও স্বামী যখন বিদেশে থাকেন তখন তাহা স্থগিত রাখা উচিত—
প্রসাধনং নৃত্যগীতসমাজোৎসবদর্শনম্।
মাংসমদ্যাভিযোগং চ ন কুর্যাৎ প্রোষিতে প্রভৌ।
সেই অবস্থায় নারীগণ অগর্হিত শিল্পের দ্বারা সময় যাপন করিবেন—
প্রোষিতে ত্ববিধায়ৈব জীবেচ্ছিল্পৈরগর্হিতৈঃ। ঐ পৃ ৫৯২
বাৎস্যায়ন বলেন—
প্রাগ্যৌবনাৎ স্ত্রী কামসূত্রং তদঙ্গবিদ্যাশ্চাধীয়ীত পিতৃগৃহে এব।
দর্শন পুরাণ ইতিহাস ও নানাবিধ কলাবিদ্যার সঙ্গে নারীরা বিবাহের পূর্বে পিতৃগৃহে ও বিবাহের পরেও পতির অভিপ্রায়ানুসারে কামসূত্র এবং তদঙ্গবিদ্যা অধ্যয়ন করিতে অধিকারিণী ছিলেন (বাৎস্যায়ন কামশাস্ত্র, তৃতীয় অধ্যায়)। টীকাকার যশোধরেন্দ্র এই বিষয় আরও স্পষ্ট করিয়া বুঝাইয়া দিয়াছেন।