কলাবিদ্যা হিসাবে নারীদের প্রতি আয়ুর্বেদশাস্ত্রশিক্ষার ব্যবস্থাও প্রচলিত ছিল। বাৎস্যায়ন ও যশোধর চতুঃষষ্টি অঙ্গবিদ্যার বিস্তৃত উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন (কামশাস্ত্র তৃতীয় অধ্যায়)। নারীনৃত্যের সর্বাপেক্ষা বড় দৃষ্টান্ত হইল বৃহন্নলার কাছে বিরাটগৃহে রাজকন্যাদের নৃত্যশিক্ষার কথা—
স শিক্ষয়ামাস চ গীতবাদিতং
সুতাং বিরাটস্য ধনঞ্জয়ঃ প্রভুঃ॥ বিরাট ১১.১২
বৌদ্ধযুগে দেখা যায়, সংঘমিত্তা হেমা ও অগ্গিমিত্তা ত্রিবিধবিজ্ঞান-পারদর্শিনী (দীপবংশ, ১৫ পর্ব)। সীবলা ও মহারুহা বিনয় সুত্তপিটক ও অভিধম্ম পড়াইতেন (ঐ)। অঞ্জলি ছিলেন শাস্ত্রে ও দৈবশক্তিতে অধিকারিণী। থেরীগাথায় বহু নারীর নানা বিষয়ে গভীর সাধনা ও বিদ্যার পরিচয় মেলে।
খ্রীস্টায় ১১৮৩ সালে কাকতীয় রাজকন্যা রুদ্রদেবী বাংলাদেশ হইতে পরমশৈব বিশ্বেশ্বরকে দক্ষিণদেশে নিয়া প্রতিষ্ঠিত করেন। মালকাপুর-শাসনে দেখা যায়, এই কন্যা পুরুষের মত রাজা হইয়া প্রবল প্রতাপে এবং জ্ঞান ও কলার দিকে দৃষ্টি রাখিয়া রাজ্যশাসন করেন। ইহার এক শতাব্দী পরে বিজয়নগরসম্রাট কম্পরায়ের মহিষী গঙ্গাদেবী ছিলেন জ্ঞানে ও কাব্যরচনায় প্রখ্যাত। তাঞ্জোরপতি রঘুনাথভূপের সভাকবি ছিলেন স্ত্রীকবি মধুরবাণী। মালাবারের প্রধান সপ্তকবির চারিজনই স্ত্রীলোক। তাঁহাদের মধ্যে নারীকবি অব্যার অতুলনীয় প্রতিভার পরিচয় দিয়া গিয়াছেন। লীলাবতীর নাম সবাই জানেন। বাংলাদেশে খনার নাম ঘরে ঘরে। মণ্ডনমিশ্রের পত্নীর কথাও সুবিদিত। দর্শনশাস্ত্রে উভয়ভারতীর অসাধারণ অধিকার ছিল। মিথিলাধিপতি পদ্মসিংহের রানী বিশ্বাসদেবী ছিলেন স্মৃতিশাস্ত্রের প্রখ্যাত আচার্য। বহু নারীকবির রচনার পরিচয় সংস্কৃতসাহিত্যে পাওয়া যায়। তাহা লিখিতে গেলে স্বতন্ত্র একখানি পুঁথি হইয়া উঠে এবং সে বিষয়ে গ্রন্থ লিখিতও হইয়াছে। অধ্যাপক কানে-লিখিত ধর্মশাস্ত্রের ইতিহাসে নারীদের রচিত বহু স্মৃতিগ্রন্থের পরিচয় মেলে।
বীরনারী হিসাবেও ভারতের বহু মহিলা প্রসিদ্ধ। ঋগ্বেদেও সেইরূপ নারীদের পরিচয় মেলে। আহমদনগরের রানী চাঁদবিবি মোঘল সেনাপতিকে যুদ্ধে বিস্মিত করিয়া দেন। সিপাহীবিদ্রোহের সময়ে ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ স্যার হগ্ রোজকে সহজে ছাড়িয়া দেন নাই। ভীমসিংহপত্নী পদ্মিনীর বীরত্ব আর-এক রকমের। এইসব মহীয়সী মহিলা যেভাবে প্রাণ দিয়াছেন তেমন করিয়া