পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সামাজিক অবস্থা: বিবাহ
৩১

এবং বাজসনেয়ি-সংহিতায় (১৩. ৩০. ৩১) দৃষ্টিপাত করিলে বুঝা যায় শূদ্রাতেও আর্যগণ ব্যভিচাররত হইতেন। বৃহদারণ্যক উপনিষদের এমন কয়েকটি মন্ত্র আছে (৬. ৪. ৯-১১) যাহা অনুবাদ করাও অসম্ভব।

 তৈত্তিরীয়-সংহিতা (৬.৮.৩ মন্ত্র) এবং মৈত্রায়ণী-সংহিতা (৩.৪. ৭ মন্ত্র) দেখিলে বুঝা যায় তখনকার দিনেও নৈতিক বিষয়ে বেশি কড়াকড়ি করিলে চলিত না। স্মৃতি ও অর্থশাস্ত্রে গূঢ়োৎপন্ন সন্তানদের কথা ও ব্যবস্থা আলোচিত হইয়াছে। বোধায়ন (২. ২.৩৪) ও আপস্তম্ব (২. ১৩. ৭) ধর্মসূত্র বলেন যে, জনকের কথায় বুঝা যায় কোনোকালে স্ত্রীগণ ছিল সাধারণভোগ্যা। শ্বেতকেতু তাহা নিবৃত্ত করেন। নারীদের এই দুর্বলতার কথা বৃহস্পতিও (২.৩০) উল্লেখ করিয়াছেন।[১]

 বেদে যম-যমীর উপাখ্যানের (ঋগ্বেদ ১০.১৩) হয়তো অন্য কোনো অর্থ আছে। ঋগ্বেদে (১০.৬১) যে আপন দুহিতার প্রতি প্রজাপতির কামমোহের কথা আছে তাহার অর্থ কুমারিলভট্ট দেখাইয়াছেন, উষার দিকে সূর্যের ধাবমান হইবার কথা, কাজেই এইসব যন্ত্রের দ্বারা কিছু প্রমাণিত হয় না। ঐতরেয় (৩. ৩৩) এবং শতপথ ব্রাহ্মণেও (১. ৭. ৪. ১) এই প্রসঙ্গের অন্য ব্যাখ্যা আছে। কখনও কখনও ভ্রাতা বা জাররূপে দুর্ভাগ্য আসিয়া গর্ভ নষ্ট করে (ঋগ্বেদ ১০. ১৬২. ৫), কখনও নিদ্রাবস্থায় দুষ্টসত্বেরা ভ্রাতা বা পিতা হইয়া সঙ্গত হয় (অথর্ব ৮. ৬. ৭)। এইসব মন্ত্রেরও হয়তো অন্য কোনো হেতু থাকিতে পারে। তবে অথর্ব-ব্রাত্যকাণ্ডে (১৫. ২. ৫) ব্রাত্যের সঙ্গে পুংশ্চলীর উল্লেখ করায় বুঝা যায়, পরপুরুষপ্রিয়া ব্যভিচাররতা রমণীর তখনও অভাব ছিল না। অথর্বের ১৪. ১. ৩৬ মন্ত্রে সূর্যার প্রসঙ্গে আমরা ‘মহানগ্ন্যাঃ' শব্দ পাই। অথর্বে (২০.১৩৬.৫ মন্ত্রে) ‘মহানগ্নী’ শব্দ দেখি। মহানগ্নী শব্দও নির্লজ্জা-ব্যভি- চারিণী অর্থে প্রযুক্ত। বাজসনেয়ি-সংহিতায় (৩০.১৬) ‘অতিত্বরী বিজর্জরা’ শব্দেও তাহাই বুঝায়। তৈত্তিরীয়-ব্রাহ্মণে (৩.৪.২.১) এবং বাজসনেয়ি-সংহিতায় (৩০.৬) ‘কুমারী-পুত্র’ শব্দ দেখা যায়। অথর্বে (৫.৫.৮) ‘কানীন-পুত্রের’ কথা আছে। ঋগ্বেদে (৪.১৯.৯) দেখা যায়, অগ্রুবকে বল্মীক কীটেরা খাইতেছিল, ইন্দ্র তাহাকে উদ্ধার করেন। সায়ণ বলেন, সেই সন্তানের মাতার নাম অগ্রূ। অনেকে মনে করেন বিবাহের অগ্রে জাত বলিয়া অগ্রূব। এই রকম সন্তানকে


  1. Mysore Tribes and Castes, Vol II, p. 361