পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সামাজিক অবস্থা: বিবাহ
৩৩

 ভ্রূণহত্যাও যে তখন চলিত তাহা বুঝি সর্বত্র তাহার বিরুদ্ধে উচ্চারিত সব বিধি-বিধানের দ্বারা। ভ্রূণহত্যা অতি নিন্দিত পাতক।[১] আরণ্যকে এবং উপনিষদেও ভ্রূণহত্যা বহুনিন্দিত।[২] শাঙ্খায়ন-শ্রৌতসূত্রেও (১৬.১৮.১৯) এই কথা পাই। সেই যুগে কন্যাহত্যার কথা বিশেষ শোনা যায় না, অথচ ভ্রূণহত্যার এত নিন্দা দেখিয়া মনে হয়, ভারতে পরে কোনো-কোনো শ্রেণীর মধ্যে যে কন্যাহত্যা চলিত হইয়াছিল তাহা খুব প্রাচীন কালের নহে।

 ক্রমে যখন বিবাহ প্রথা সুপ্রতিষ্ঠিত হইল, তখনও ব্যভিচার ও দুর্নীতি একেবারে বিদূরিত হয় নাই। কোনো দেশে কোনোকালেই তাহা হয় না। তবে জাতিভেদের যুগে ভারতের স্ত্রীগণের মধ্যে ব্যভিচার ঘটিলে পাছে অজ্ঞাতসারে বর্ণসঙ্কর উৎপন্ন হয়, তাই অনেক সাবধানতা অবলম্বিত হইয়াছে। কিন্তু তবু তখনও শুধু এই কারণে পত্নীকে ত্যাগ করা চলে নাই (নারদ ১২. ৯০)। পরাশরের (১০, ১৫) মতে ব্যভিচারের ফলে সন্তান যদি জন্মে এবং স্ত্রী যদি কুল ছাড়িয়া যায় তবেই তাহাকে ত্যাগ করা চলে। হারিত (৩. ১৩) এরূপস্থলেও স্ত্রীত্যাগের বিরুদ্ধে।[৩]

 বৈজ্ঞানিকদের মতে সৃষ্টির প্রারম্ভে সবই ছিল অগ্নিময়, বাষ্পময়; তাহার পর ক্রমে স্থিরা শীতলা হইলে ভূতধাত্রী ধরিত্রীর বক্ষে জীবকুল প্রতিষ্ঠিত হইল। তেমনি সমাজেও প্রথমে এইরূপ উচ্ছৃঙ্খল যুগ যায়। তাহার পর ক্রমে সুব্যবস্থিত সংসারযাত্রার যুগ আসে। তখনও যে মানুষের উচ্ছৃঙ্খলতা সর্বতোভাবে দূর হয় তাহা নহে। আজও কোনো দেশেই তাহা হয় নাই। সব দেশেরই বিচারশালার ফলাফল দেখিলেই তাহা বুঝা যায়। ভারতের বহু পুরাতন কথা লোকে স্মরণে রাখিয়াছে, তাই তাহার অনেক গলদের খবর এখনও পাওয়া যায়। এমনকি একদিন যে বিবাহ প্রথাও সমাজে ছিল না সেকথা অন্যসব দেশ ভুলিয়া গেলেও ভারতবর্ষ ভোলে নাই। সেইসব অতিপুরাতন উচ্ছৃঙ্খল


  1. কপিসুল-সং, ৪৭.৭; কাঠক-সং, ৩১.৭; তৈত্তিরীয়-ব্র. ৩.৮.২০.১; ৩.৯.১৫.৯; ৩,২,৮,১১; তৈত্তিরীয়-সং. ৬.৬.১০.৩; মৈত্রায়ণী সং. ৪.১.৯
  2. তৈত্তিরীয় আরণ্যক, ২৭.৩; ২.৮.২; ২.৮.৩; ১০.১.১৫; কৌষীতকি-ব্রাহ্মণ- উপনিষৎ ৩.১; বৃহদারণ্যক, ৪.৩.২২; মহানারায়ণ, ৬.১১; ১৭.৭; ১০.১; নৃসিংহ-পূর্বতাপনী, ৫.৪; ইত্যাদি।
  3. Mysore Tribes and Castes', Vol. II, p. 356