বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
প্রাচীন ভারতে নারী

যুগের কথা ভারতবর্ষ এখনও রক্ষা করিয়া চলিয়াছে। এই জন্য সমাজবিজ্ঞানের আলোচকদের বহু ধন্যবাদ ভারতের প্রাপ্য।

 পূর্বেই বলা হইয়াছে, বোধায়ন ধর্মসূত্রে ও আপস্তম্বে সেই যুগের উল্লেখ আছে যে যুগে বিবাহ প্রথা প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। মহাভারতেও তাহার উল্লেখ পাই। উদ্দালক নামে এক মহর্ষি ছিলেন (আদি ১২২.৯)। তাঁহার পুত্র শ্বেতকেতু বিবাহের মর্যাদা স্থাপন করিলেন (ঐ ১০)। উদ্দালক এবং শ্বেতকেতুর সমক্ষেই এক ব্রাহ্মণ উদ্দালক-পত্নীর হাত ধরিয়া লইয়া গেলেন। ইহাতে শ্বেতকেতু জ্বলিয়া উঠিলেন (ঐ ১১-১৩)। পিতা বুঝাইলেন, বাবা রাগ করিও না, ইহাই সনাতন ধর্ম। সংসারে সর্ববর্ণের নারীরাই এই বিষয়ে অনাবৃত অর্থাৎ স্বেচ্ছাবিহারিণী—

মা তাত কোপং কার্বীত্ত্বমেষ ধর্মঃ সনাতনঃ।
অনাবৃতা হি সর্বেষাং বর্ণনামঙ্গনা ভুবি। আদি ১৪

 সনাতনধর্ম হইলেও শ্বেতকেতু ঐ নিকৃষ্ট ধর্ম না মানিয়া তাহার স্থানে উত্তম নূতন ধর্ম স্থাপন করিলেন। তখন হইতে বিবাহ ছাড়া স্ত্রীপুরুষের সঙ্গম পাপ হইল (ঐ ১৬-২০)। প্রথা শুধু সনাতন হইলেই হইবে না, তাহা ভালো কি মন্দ তাহাও দেখিতে হইবে। মহর্ষি শ্বেতকেতু সেইভাবে দেখিয়াছিলেন বলিয়াই আজ আমাদের সমাজে বিবাহ প্রথা চলিয়াছে, নহিলে সেই সনাতন প্রথায় নারী-পুরুষের অবাধ মিলন আজও চলিত।

 বোধায়ন-ধর্মসূত্রে দেখা যায়, উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সর্বপ্রথমে ঔরসপুত্রের দাবি এই কথা আচার্য ঔপজঙ্ঘনি বলেন (২.২.৩৩)। ঔপজঙ্ঘনিকে রাজা জনক জিজ্ঞাসা করেন, পুত্র কাহার, উৎপাদয়িতার না ক্ষেত্রস্বামীর অর্থাৎ জননীর পতির? তদুত্তরে ঔপজঙ্ঘনি জনককে পুরাতন কথা বলেন, একবার সত্যযুগে যমরাজা আমাকে (ঔপজঙ্ঘনিকে) ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করেন যে, পরস্ত্রীতে উৎপন্ন পুত্র কি উৎপাদয়িতার অথবা সেই স্ত্রীর স্বামীর—

যমঃ কৃতে যুগে ঔপজঙ্ঘনিমাহূয় প্রপ্রচ্ছ
পরবারেষুঃপাদিতঃ পুত্রঃ কিং জনয়িতুরিতি উতাহো ক্ষেত্রিণ ইতি।

—বোধায়ন-ধর্ম সুত্রে গোবিন্দস্বামী প্রণীত বিবরণ ২.২.৩৪

 সন্তান জনয়িতারই হইবে ইহাই নিশ্চয় করিয়া সেইকথা আমি তখন যমপুরে বলিয়াছিলাম—