পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সামাজিক অবস্থা: বিবাহ
৩৭

বলিয়াছিলেন, কাহার ঔরসে তোমার জন্ম কেমন করিয়া বলি; যৌবনে অনেকের পরিচারণায় তোমাকে পাইয়াছি—

বহ্বহং চরন্তী যৌবনে ত্বামলভে

 বিবাহ প্রথা প্রতিষ্ঠিত হইয়া ক্রমে গৃহপরিবার সুব্যবস্থিত হইল। পূর্বেই বলা হইয়াছে, আর্যদের মধ্যে পিতাই পরিবারের কর্তা (শতপথ-ব্রাহ্মণ, ২. ৫. ১. ১৮), মায়ের নাম তার পরে (ছান্দোগ্য উপনিষদ ৭. ১৫.২)। পতি-পত্নীর সম্বন্ধের মধ্যেও পতির স্থান প্রধান। দ্রবিড় সভ্যতায় নারীদের প্রাধান্যের যতটা পরিচয় মেলে আর্য সভ্যতায় ততটা দেখা যায় না।

 তখনকার দিনে সকলেই পুত্রকামনা করিতেন। তাই বৃহদারণ্যকের এইসব (১. ৪. ৮) বাণী, ‘তাহা পুত্র হইতেও প্রিয়’—

 “তদেতৎ প্রেয়ঃ পুত্রাৎ” এবং “পুত্রাণাং কামায় পুত্রাঃ প্রিয়া ভবন্তি।” (ঐ ২. ৪. ৫) “কারণ আত্মা বৈ জায়তে পুত্রঃ,” “আত্মা বৈ পুত্রনামাসি” (শতপথ-ব্রাহ্মণ ১৪. ৯. ৪. ২৬)। বৃহদারণ্যকেও এই কথা; সেখানে আরও দেখি, “প্রতিরূপঃ পুত্রো জায়তে” (৪. ১. ৬)। ঋগ্বেদ দশম মণ্ডলে ১৮৩ সূক্তে আগাগোড়াই পুত্রের মহত্ব ঘোষিত। ঋগ্বেদের ৫. ২৫. ৫ মন্ত্রে, অথর্বের ৬. ৮১. ৩ মন্ত্রে এবং আরও বহু বহু স্থলে পুত্রের জন্যই প্রার্থনা। পুত্রৈষণা বিত্তৈষণাই গৃহীর ধর্ম।

 কন্যাকে দুহিতা বলে। কন্যাও স্নেহের ছিল, কিন্তু পুত্রের মত নহে। কন্যারা বাল্যে পিতার আশ্রিতা থাকিত। পিতার অভাবে ভাইয়ের আশ্রয় এবং বিবাহ হইলে পতির আশ্রয় মিলিত। ভাই না থাকিলে কন্যাদের যে বিবাহ হওয়া কঠিন ছিল সেকথা পূর্বেই বলা হইয়াছে। পিতার অভাবে ভাইয়েরা ভগ্নীকে পালন করিত। সংসারে বাপের পরেই মা তাহার পর ভাই তাহার পর ভগ্নী।

 ছান্দোগ্যে (৭ ১৫. ২.) এইভাবেই পর-পর মহত্ত্ব দেখা যায়। ভগ্নীকে স্বসা বলে। ভগিনী অর্থে ভাগ্যবতী, অথবা যে পিতার ধনের ভাগ পায়।

 ঋগ্বেদে প্রায়ই বিবাহ প্রসঙ্গে নারী বলিয়া স্ত্রীলোকের উল্লেখ পাই।[১] বৈদিক কালে যৌবনেই বিবাহ হইত। কখনও কখনও কন্যার ভাই না থাকিলে বা অন্য কোনো দোষ থাকিলে পিতৃগৃহেই কন্যা জীর্ণ হইত, সেইরূপ কন্যাকে যে ‘অমাজুর’ বলিত তাহা পূর্বেই বলা হইয়াছে। অভিরূপ পতির


  1. ঋগ্বেদ ১০. ১৮, ৭-৮. অথর্ব ১৪, ২, ১৩.২০. ২১. ৬৩. ইত্যাদি