জন্য প্রার্থনায় বুঝা যায় যুবতী-বিবাহই চলিত ছিল। যখন কন্যা যুবতী, পতিলাভের জন্য তখন ব্যাকুলতা জাগিয়াছে। সূর্যার বিবাহের মন্ত্রগুলি (ঋগ্বেদ ১০.৮৫) দেখিলে বেশ বুঝা যায়, কন্যা রীতিমত যুবতী। সূত্র-যুগে অল্পবয়সে বিবাহের উল্লেখ আরম্ভ হয়। ছান্দোগ্য-উপনিষদে (১.১০.১) ‘আটিক্যা সহ জায়য়া’ কথায় কেহ বলেন, উযস্তি চাক্রায়ণের স্ত্রীর নামই ছিল আটিকী; কেহ অর্থ করেন, ‘অটনযোগ্যা’ অর্থাৎ পর্যটন-সমর্থা; শঙ্কর বলেন, ‘অনুপজাতপয়োধরাদি স্ত্রীব্যঞ্জনা’।
নারীদের অবরোধের কথা বেদে দেখা যায় না। সমাজে নারীরা সহজেই বিচরণ করিতেন, যাগযজ্ঞে যোগ দিতেন। নারীরা বেদমন্ত্রও রচনা করিতেন। অথর্বে নারীদের উপনয়ন ও ব্রহ্মচর্যের কথা আছে, তাই বুঝা যায় নারীদের শিক্ষার অধিকার ছিল। উপনিষদে ব্রহ্মবিদুষী নারীদের কথা পাই। নৃত্যগীতে নারীর শিক্ষা নিতে হইত (তৈত্তি-সং ৬. ১. ৬. ৫; মৈত্রা-সং ৩. ৭. ৩)। জাতিভেদ প্রথা সুপ্রতিষ্ঠিত হইবার পূর্ব পর্যন্ত বরকন্যার পছন্দ ও যৌবনবিবাহ চলিত। তাহার পর পছন্দ ও যৌবনবিবাহ গেল। স্মৃতির যুগে কন্যাদের অল্পবয়সেই বিবাহ হইত।
ভাই-ভগ্নীতে বিবাহ বৌদ্ধশাস্ত্রে দেখা যায়, কিন্তু বৈদিক সাহিত্যে তাহা নিন্দিত। গোভিল-গৃহ্যসূত্রে (৩.৪. ৫) সগোত্রা কন্যা বিবাহ নিষিদ্ধ। আপস্তম্ব ধর্মসূত্রে (২. ৫. ১৫) দেখা যায়, সগোত্রকে কন্যা দিবে না, ‘সগোত্রায় দুহিতরং ন প্রযচ্ছেৎ’। গৌতম ধর্মসূত্রে (৪. ২) দেখি, অসমান-প্রবরের সঙ্গে বিবাহ হইবে। পিতৃবন্ধু হইতে সাতপুরুষ ছাড়াইলে এবং মাতৃবন্ধু হইতে পাঁচপুরুষ ছাড়াইলে বিবাহ চলে (৪.৩-৫)। মনু (৩.৫) বলেন, পিতার অসগোত্রা মাতার অসপিণ্ডা কন্যা প্রশস্ত। যাজ্ঞবল্কের (১. ৫২-৫৩) মতও এই রকম। সবর্ণা-বিবাহ শ্রেষ্ঠ হইলেও অনুলোম-রীতিতে অসবর্ণা-বিবাহ তখন রীতিমতই চলিত এবং তাহা শাস্ত্রসম্মতও ছিল। তবে দ্বিজাতির পক্ষে শূদ্রকন্যাকে বিবাহটা অনেকে পছন্দ করিতেন না। বোধায়ন গৌতম ও উশনার মতে এইরূপ বিবাহে সস্তানেরা পিতার বর্ণই প্রাপ্ত হইত।
বর্ণশুদ্ধিরক্ষা প্রয়াসী মনু যে অনুলোম-বিবাহের বিধান দিয়াছেন (২. ২৩৮; ৩. ১২-১৩) তাহার কারণ, তাহা ছিল সমাজপ্রচলিত, একদিনে তাহা উঠাইয়া দেওয়া সম্ভব ছিল না। অনুলোম-বিবাহের সম্মতি গৌতম (৪.১৬)