বরপক্ষ স্নেহ বা শ্রদ্ধাবশতঃ যাহা কন্যাকে দেন তাহাতে দোষ নাই (৩, ৫৪-৫৫)। এইসব বিষয়ে মধ্যেমধ্যে জামাতা ও বরপক্ষের কার্পণ্যও নিন্দিত হইয়াছে। তবে অঙ্গহীনা কুশ্রী কন্যার বিবাহে বরকে অর্থ দিয়াই বিবাহে সম্মত করিতে হইত (ঋগ্বেদ ১০. ২৭. ১১)। সুন্দরী কন্যা সবাই চাহিত, তাহার উপর কন্যা যদি ভালো হয় তবে তো কথাই নাই (ঐ ১০.২৭. ১২)। সুন্দরী না হইলে ভগ্নীকে টাকা দিয়া ভাইরা বিবাহ দিতেন (ঐ ১. ১০৯.২)। কন্যার বিবাহের সঙ্গে ‘অনুদেয়ী’ কথাটি ঋগ্বেদে (১০. ৮৫. ৬) পাওয়া যায়। সায়ণ অর্থ করেন, মেয়ের মন প্রসন্ন রাখিবার জন্য তার সঙ্গে দীয়মানা বয়স্যা (“বধূবিনোদায় অনুদীয়মানা বয়স্যা”)। কেহ কেহ অর্থ করেন, কিছু পণ।[১]
বিবাহ-অনুষ্ঠান
বৈদিক যুগেও বিবাহ-অনুষ্ঠানে ঘটা করিয়া নানারকমের আচার প্রতিপালিত হইত। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলে ৮৫ সূক্তটির বিষয় হইল সূর্যার বিবাহ। এই সূক্তটি বেশ দীর্ঘ, কারণ ইহাতে ৪৭টি ঋক্ আছে। অথর্ববেদেরও চতুর্দশ কাণ্ডের প্রথম ও দ্বিতীয় সূক্ত সূর্যার বিবাহ লইয়া। তবে তাহা আরও বিশদভাবে বর্ণিত। কারণ, প্রথম সূক্তে আছে ৬৪টি মন্ত্র এবং দ্বিতীয়সূক্তে আছে ৭৫টি। তবেই মোট হইল ১৩৯টি মন্ত্র। তাহার পরে গৃহ্যসূত্রগুলিতেও বিবাহপদ্ধতিটি সবিস্তারে বর্ণিত। অনেকে মনে করেন, বৈদিক বিবাহপদ্ধতির সঙ্গে প্রাচীন য়ুরোপীয় আর্যদেরও বিবাহপদ্ধতির মিল কিছুকিছু আছে।
বিবাহে বরপক্ষ কন্যার বাপের বাড়ি আসিতেন। সেখানেই অনুষ্ঠান আরম্ভ হইত। বরপক্ষীয়দের জন্য ঘটা করিয়া উৎসবের আয়াজন হইত। উৎসবে গোহত্যা করা হইত।
সূর্যার বিবাহ-মন্ত্রে আছে, সূর্যার বিবাহে সূর্য যে উপহার পাঠাইয়াছেন তাহা আগেই রওয়ানা হইয়া চলিল। মঘাতে যে গোহত্যা করা হয় পূর্ব ও উত্তর ফাল্গুনী নক্ষত্রে তাহা বহন করিয়া লইয়া যাওয়া হয়—
সূর্যায়া বহুতুঃ প্রাগাৎ সবিতা যমবাসৃজৎ।
অঘাসু হন্যংতে গাবোঽর্জ্জু্ন্যোঃ পর্যুহ্যতে। ঋগ্বেদ ১০, ৮৫, ১৩
একসময় গোহত্যার এত প্রচলন ছিল যে গোহত্যার জন্য বিশেষ স্থানও নির্দিষ্ট ছিল। সেখানে অনেক গো নিহত হইত (ঐ ১০. ৮৯.১৪)।
- ↑ Whitney's Translation of the Atharva Veda Samhita. 14.1.7