এখনও বিবাহে সেই গবালম্ভের একটু অবশেষমন্ত্র উচ্চারিত হয়। বিবাহ- কালে নাপিত আসিয়া বলে “গৌর্গৌঃ” অর্থাৎ “অনুষ্ঠানে হন্তব্য গো যে এই রহিয়াছে, তাহার সম্বন্ধে কি করা যায়?” তখন বর বলিবেন—
ওঁ মুঞ্চ গাং বরুণপাশাদ্ দ্বিষন্তং মেঽভিধেহীতিতৎ
জহ্যমৃষ্য চোভরোরুৎসৃজ গামত্তু তৃণানিপিবতূদকমিতি ব্রূয়াৎ। গোভিলীয়-গৃহ্য।৪. ১০, ১৯
অর্থাৎ “এই গোকে বরুণপাশ হইতে মুক্ত কর। যজমানের এবং আমার উভয়ের অনুমতিতে ইহাকে ছাড়িয়া দাও, গোবধকারীকেও যাইতে বল। এই গো এখন তৃণ খাউক, জলপান করুক।”
এই মন্ত্রটি সামমন্ত্র-ব্রাহ্মণে (২. ৮. ১৩) এবং খাদির-গৃহ্যসূত্রেও আছে (৪.৪. ১৭)। সামমন্ত্র-ব্রাহ্মণ গ্রন্থখানি পণ্ডিত সত্যব্রতসামশ্রমী মহাশয়ের দ্বারা সম্পাদিত হইয়াছিল। তাহাতে এই মন্ত্রটির ব্যাখ্যা ও অনুবাদ দেওয়া আছে।
“গৌর্গৌঃ” শব্দ নাপিত উচ্চারণ করিলে প্রথমে পূর্বোক্ত মন্ত্রটি বলিয়া তাহার পর বরকে বলিতে হয়,—
ওঁ মাতা রুদ্রাণাং দুহিতা বসুনাং
স্বসাদিত্যানামমৃতস্য নাভিঃ।
প্র নু বোচং চিকিতুষে জনায়
মা গামনাগামদিতিং বধিষ্ট। ঋগ্বেদ ৮. ১০১, ১৫
অর্থাৎ “এই গাভী হইলেন রুদ্রগণের মাতা, বসুগণের দুহিতা, আদিত্যগণের ভগ্নী, অমৃতের আবাসস্থান, সেই নির্দোষ মুক্ত গোকে বধ করিও না; এই কথা চেতনান্বিত লোকদের কহিয়াছিলাম।”
এই শেষোক্ত ঋকের ঋষি হইলেন ভার্গব জমদগ্নি।
পুরোহিতের দ্বারা এই দুইটি মন্ত্র উচ্চারণের পর এখনকার দিনে নাপিত চলিয়া যায়, এবং তাহার পর অচ্ছিদ্রাবধারণ ও বৈগুণ্যসাধন করিয়া সম্প্রদাতা বর ও কন্যা সকলেই নারায়ণকে প্রণাম করেন। তার পর এখন বরকন্যাকে বাসরঘরে লইয়া যাওয়া হয়।[১] বিবাহে নাপিতেরা এখন যে “গৌর্গৌর্” কেন বলে তাহা তাহারা নিজেরাও জানে না। তাহারা মনে করে ইহা ‘গৌরবচন’। কোথাও তাই বিবাহের সভায় নাপিত ‘গৌর’স্তুতি কোথাও
- ↑ সামবেদীয় বিবাহসংস্কার, পৃ ৪০৮; পুরোহিত দর্পণ, সুরেন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য সংকলিত অষ্টম সংস্করণ।