পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
প্রাচীন ভারতে নারী

বা হর-গৌরীর প্রণতিসূচক বাংলা দু-চারটি ছড়া কবিতা উচ্চারণ করে। বৈদিক মন্ত্রটির কথাও লোকে ভুলিয়া গিয়াছে। এই মন্ত্রটির অর্থ ও উদ্দেশ্য এখন আর কে-বা যত্নপূর্বক দেখিবেন?

 এই মন্ত্র উচ্চারণে দেখা যায় একসময়ে বিবাহে আর্যদের মধ্যে গবালম্ভ ছিল, তাহা ক্রমে চারিদিকের অহিংসা-সমর্থক মতবাদের সংস্পর্শে ধীরে ধীরে অহিংস হইয়া পড়িল। তাই ইহার প্রথমমন্ত্র বেদের উত্তরভাগের। অহিংসা-সূচক দ্বিতীয় মন্ত্রটি প্রাচীন সংহিতা হইতেই সংগৃহীত। অহিংসা প্রচার করিবার জন্যই বেদবাহ্য জৈন বৌদ্ধাদি মতের উৎপত্তি।

 আর্যদের ক্রিয়াকাণ্ড, পারিবারিক কৃত্য ক্রমেই এইরূপে অহিংস হইতে লাগিল। জৈন বৌদ্ধাদি মতের সংস্পর্শে ক্রমে সামাজিক জীবনে বৈরাগ্য ও সন্ন্যাসের আদর্শ আসিতে লাগিল। চারি আশ্রমের মধ্যে গৃহস্থ-আশ্রম মোটে একপাদ অর্থাৎ চারিভাগের একভাগ হইয়া দাঁড়াইল। বাকি তিনপাদই সন্ন্যাস বা ব্রহ্মচর্য। বিধবাদের মধ্যে পুনর্বিবাহের স্থলে ব্রহ্মচর্য প্রতিষ্ঠিত হইল। এখন পুরুষেরা চারি আশ্রমের দায় হইতে মুক্ত হইয়াছে, কিন্তু বিধবার উপর সারাজীবনব্যাপী ব্রহ্মচর্যটি ঠিক তেমনি চাপানো আছে। ব্রত উপবাসাদিও সবই এখন বিধবার কৃত্য। এইগুলি বিধবাদের প্রকরণে আবার আলোচিত হইবে।

 এখন যে প্রসঙ্গ চলিতেছে তাহাতেই আসা যাউক, অর্থাৎ প্রাচীন কালের বিবাহ-অনুষ্ঠানের কথাই চলুক। কন্যাকে শয্যা-আভরণ প্রভৃতি উপহার সাজাইয়া দেওয়া হইত (ঋগ্বেদ ১০. ৮৫. ৭)। বিবাহের রথটি সুন্দর করিয়া প্রস্তুত করা হইত এবং তাহা পুষ্পে পল্লবে সাজানো হইত। (ঐ ১০. ৮৫. ১৩; ঐ, ২০)। ঋগ্বেদের সূর্যা-বিবাহ দেখিলে বুঝা যায়, পতিকুলে কন্যা যাহাতে ধ্রুব হয় তাহা প্রার্থনা করিয়া মন্ত্রপাঠ হইত। কন্যাকে তাই ধ্রুব প্রতিষ্ঠা স্বরূপ শিলাতে আরোহণ করাইয়া পতি তাহার হস্ত ধারণ করিয়া হোমাগ্নিকে প্রদক্ষিণ করিতেন।

 বিবাহের প্রধান তিনটি অঙ্গ। সেই সবই অবশ্য বরকন্যার পরস্পরকে বরণ করিবার পর অনুষ্ঠিত হইত। ‘একত্র গমন’— তাহা হয় সপ্তপদীতে, স্বামীর গৃহের অগ্নিতে ‘একত্রে যজন’ (যজ্ঞ), ও পতিগৃহের সকলের সঙ্গে ‘একত্রে ভোজন’ (বৌভাত)। বিবাহে উভয়ের ঘনিষ্ঠ যোগ, দীর্ঘজীবন, সৌভাগ্য এবং