পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
প্রাচীন ভারতে নারী

আসিতেছে। কিন্তু আমরা বাল্যকালে এই আচার পল্লীগ্রামে পালিত হইতে দেখিয়াছি।

 সেই দ্বিতীয় বিবাহ সময়ে একটা ব্রহ্মচর্যের অভিনয় করা হইত। অর্থাৎ ব্রহ্মচারীর ন্যায় ভিক্ষান্ন সংগ্রহ করিয়া ক্ষার-লবণ বিনা কন্যাকে খাইতে হইত। এই ভিক্ষাকে ‘মাঙ্গন’ বলিত। এখনকার দিনে যেমন ব্রহ্মচারীরা শূদ্রমুখ দেখার ভয়ে অন্ধকার ঘরে কিছুকাল বদ্ধ থাকিয়া কল্পনাতে আশ্রমবাস ফললাভ করে, দ্বিতীয় বিবাহে বধূরাও সেইরূপ করিত; কারণ তাহারাও তখন ব্রহ্মচর্য পালন করিতেছে। এখন ইহার কতটা কোথায় পালিত হইতেছে তাহা ঠিক বলিতে পারি না। পল্লীগ্রামে এই রীতি কতকটা এখনও পালিত হয়।

 এই দ্বিতীয় বিবাহের সঙ্গে স্ত্রীলোকদের যেসব আচার ও গান প্রভৃতি ছিল তাহা শ্লীলতার সীমাবহির্ভূত। তবে তাহাতেও বিবাহকালীন কিছু আচার পালিত হয়। ইহাতে মনে হয়, পূর্বে এই বিবাহই মুখ্য বিবাহ ছিল।

 এখন যে বিবাহের পরের রাত্রিটি ‘কালরাত্রি’ নামে অভিহিত তাহাতে যে বরকন্যার যোগ ঘটিতে দেওয়া হয় না, তাহা কি এই ব্রহ্মচর্যেরই অবশেষ? পূর্ব-ইতিহাস বিস্মৃত হওয়ায় এখন কেহ কেহ বলেন, কালরাত্রিতে বেহুলার সঙ্গে থাকায় লখিন্দর সর্পদংশনে মারা যায়, তাই এই নিষেধ।

 যৌবনে কন্যাদের বিবাহ হইলে একটা মুশকিল এই হইতে পারে যে, বিবাহকালে হোমাগ্নির সম্মুখে যদি কন্যা রজস্বলা হয় তখন কি করা যায়? কারণ রজস্বলা অবস্থায় নারী তো যজ্ঞে যোগ দিতে পারেন না। তাহার প্রতিবিধানার্থ আপস্তম্ব প্রথমে এই প্রশ্ন তুলিয়াছেন—

বিবাহে বিত্ততে যজ্ঞে সংস্কারে চ কৃতে যদা।
রজস্বলা ভবেৎ কন্যা সংস্কারস্তু কথং ভবেৎ। ৭.৯

অর্থাৎ, বিবাহের যজ্ঞ যখন বিস্তৃতভাবে আরম্ভ করা হইয়াছে, যখন সংস্কার করা হইতেছে, তখন যদি কন্যা রজস্বলা হয়, তবে সংস্কার সমাপ্ত হইবে কেমন করিয়া?

 তাহার উত্তরে আপস্তম্ব নিজেই বলিতেছেন, কন্যাকে তখন স্নান করাইয়া নূতন বস্ত্রাদির দ্বারা শোভিত করিয়া পুনরায় আহুতি দিয়া বাকি কর্ম সমাপ্ত করিবে—

স্নাপয়িত্বা তদা কন্যামন্যৈর্বস্ত্রৈরলঙ্কৃতাম্।
পুনঃ প্রত্যাহুতিঃ হুত্বা শেষং কর্ম সমাচরেৎ॥ আপস্তম্ব-স্মৃতি ৭.১০