পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সামাজিক অবস্থা: সম্পত্তির অধিকার
৪৯

 এইরূপ বিবাহযজ্ঞে রজোদর্শনে কি করা উচিত তাহা শাস্ত্রের আরও বহু স্থানে বিবৃত হইয়াছে। বাহুল্যভয়ে এখানে তাহা আর দেওয়া হইল না।

সম্পত্তির অধিকার

 কন্যাকে দান ও যৌতকাদি যে দেওয়া হইত তাহা পূর্বেই বলা হইয়াছে। তবে সংসারে পত্নীর স্থান কেমন ছিল তাহা বলা একটু কঠিন। আদর্শ তখনকার দিনে খুবই উচ্চ ছিল। কারণ কন্যাকে পতিগৃহে গিয়া সম্রাজ্ঞী হইতে হইবে, এই আশীর্বাদ বেদের বহুস্থলেই আছে। কিন্তু আসল কথা হইতেছে, তখনকার আইনে কিরূপ বিধান দেখা যায়। পিতৃগৃহ হইতে প্রাপ্ত ধন এবং পতি যাহা স্ত্রীকে বিশেষ করিয়া দিতেন তাহা হইল স্ত্রীধন। এই স্ত্রীধনে নারীর নিজস্ব অধিকার ছিল। আর্যেরা যখন আর্যকন্যাই বিবাহ করিতেন তখন নারীদের অবস্থা উন্নততর ছিল। কিন্তু যখন তাঁহাদের মধ্যে শূদ্রা-পত্নী গ্রহণ বেশি করিয়া চলিল তখন ক্রমে সেই সম্মান আর রহিল না।

 শতপথ-ব্রাহ্মণে যে আছে নারীদের নিজের বা সম্পত্তির উপর অধিকার নাই (৪. ৪. ২. ১৩) তাহা সেই জাতীয় কথা। মৈত্রায়ণী-সংহিতায় (৪. ৬. ৪) ও তৈত্তিরীয়-সংহিতায়ও (৬.৫. ৮. ২) অনুরূপ কথা দেখা যায়।

 বিবাহকালে অগ্নির সমক্ষে পিতৃকুল হইতে যাহা প্রাপ্ত তাহা ‘অধ্যগ্নি‘। পিতৃগৃহ হইতে পতিগৃহে যাইবার সময় প্রাপ্ত ধনকে বলে ‘অধ্যাবাহনিক’ (কুল্লূকভট্ট)। মনু বলেন, অধ্যগ্নি অধ্যাবাহনিক প্রীতিবশত পতির কাছে প্রাপ্ত ভাইয়ের কাছে মায়ের কাছে বাপের কাছে প্রাপ্ত এই ছয় প্রকারে প্রাপ্ত ধনই স্ত্রীধন—

অধ্যগ্ন্যধ্যাবাহনিকং দত্তং চ প্রীতিকর্মণি।
ভ্রাতৃমাতৃপিতৃপ্রাপ্তং ষড়্‌বিধং স্ত্রীধনং স্মৃতম্। মনু ৯. ১৯৪

 নারদীয়-মনুসংহিতাতেও (১৩.৮) এই ব্যবস্থা দিয়াছেন। যাজ্ঞবল্ক্যেও (৮.৩-১৪৪) এই বিধানই দেখা যায়।[১]

 বরদরাজ-কৃত ব্যবহার-নির্ণয়ে দেখা যায়, নারদ ও বিষ্ণুর সেই মত। সেইখানে দেবলের ও কাত্যায়নের মতও উদ্ধৃত হইয়াছে।[২]


  1. Adyar Series, 29
  2. দায়বিভাগ কাণ্ড। পৃ ৪৬৪