বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
প্রাচীন ভারতে নারী

 মহাভারতে দেখা যায়, নারীরা বিবাহকালে শ্বশুরাদি গুরুজনের কাছে প্রীতি-উপহার বা প্রীতিদাত্মস্বরূপে ধনরত্নাদি লাভ করিতেন। তখন কন্যাদের আদর ছিল—

শ্বশুরাৎ প্রীতিদায়ং তৎ প্রাপ্য সা প্রীতমানসা। অশ্বমেধ, ৮৯. ২৯

 এই ধন যৌতক স্বরূপে গণনীয়। কন্যাপক্ষীয়রাও বরপক্ষের বাড়ি গেলে বরপক্ষের কাছে রত্নাদি উপহার পাইয়া ফিরিতেন—

রত্নান্যাদায় শুভ্রাণি দত্তানি কুরুসত্তমৈঃ। আদি ২২১, ৬২

 বৈদিকযুগে স্ত্রীধনরূপে নারীরা কি পাইতেন তাহা আলোচনা করিতে গেলে তখনকার দিনের বেশভূষা ও অলংকারাদির বিষয় আলোচনা করিতে হয়। এই বিষয় অধ্যাপক Macdonell এবং Keith তাঁহাদের সম্পাদিত Vedic Index-এ ভালোরূপ আলোচনা করিয়াছেন। তাঁহারা বলেন, ‘নীবি’ অর্থ মেয়েদের অন্তর্বাস। অথর্বে ইহা উল্লিখিত। ঋগ্বেদে ‘পেশস্’ পাওয়া যায়, তাহা জরির কারুকার্যময় বস্ত্র। বাঈজীদের ‘পেশোয়াজে’র সঙ্গে কি ইহার কোনো মিল আছে? বধূ যে বস্ত্র পরিয়া বিবাহের সভায় আসিতেন তাহার নাম ‘বাধুয়’ (ঋগ্বেদ ১০. ৮৫. ৩৪)। এই সুন্দর বস্ত্রখানি পরে কোনো ব্রাহ্মণকে দেওয়া হইত। কাপড়ের সুন্দর পাড় থাকিত। তাহাকে ‘সিচ্’ বলিত (ঋগ্বেদ ১০. ১৮. ১১)। খুব জমকালো পোশাক অর্থে ‘সুবসন’ শব্দ পাই (ঋগ্বেদ ৫. ৫১. ৪)।

 বসনের পরই আভূষণ অলংকার। ঋগ্বেদে সূর্যার বিবাহপ্রসঙ্গে কিছু বেশভূষা উপকরণের নাম দেখা যায়। ‘ওপশ’ জিনিসটা কি? ঋগ্বেদে (১০. ৮৫. ৮) ইহার উল্লেখ দেখি। সায়ণ বলেন, “যেন উপশেরতে”। কেহ মনে করেন বেণি বা চূড়া, কেহ বা বুঝেন শিরোভূষণ বিশেষ। ‘কর্ণশোভনা’কে (ঋগ্বেদ ৮. ৭৮. ৩) সায়ণ মনে করেন কর্ণাভরণ। অথর্ববেদের (৬. ১৩৮. ৩) ‘কুম্ব’ ও ‘কুরীর’ দেখা যায়। হয়তো তাহা শৃঙ্গনির্মিত চিরুণি (comb?) বা বিশেষ প্রকারের কেশসজ্জা। ‘খাদি’ (ঋগ্বেদ ৫. ৫৪. ১১) হাতের বা পায়ের খাড়ু বলিয়া মনে হয়। অথর্ববেদের (৮.৬. ৭) ‘তিরীটিনঃ’ অর্থে সায়ণ মনে করেন অন্তর্ধাননিপুণ। কিন্তু অনেকের মতেই তিরীট একপ্রকার শিরোভূষণ। ‘নিষ্ক’ (ঋগ্বেদ ২. ৩৩. ১০; ৮. ৪৭. ১৫ ইত্যাদি) হইল গলার হার। নিষ্ক নামে একপ্রকার মুদ্রাও পরে দেখা যায়। হয়তো মোহরের মত বস্তুর মালা। ‘ন্যোচনী’