বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিবাহ-বন্ধন

 স্বামীর মৃত্যুর পর অনুগমনের কথাও দেখা যায়: এই নারী পতিলোক- প্রার্থনায় পরলোকগত তোমার অনুসরণ করিতে প্রবৃত্ত—

ইয়ং নারী পতিলোকং বৃণানা
নিপদ্যতে উপ ত্বা মর্ত্য প্রেতম্। অথর্ব ১৮.৩.১

 ঋগ্বেদে পতির অনুগমনের কথা দেখা যায় না। বরং মৃত পতির পাশে শয়ান পত্নীকে সম্বোধন করিয়া বলা হইয়াছে—

নারি অভি জীবলো কম্ এহি। ঋগ্বেদ ১০.১৮.৮

হে নারি, জীবনলোকে ফিরিয়া আইস।[]

 আশ্বলায়ন বলেন, নারীর দেবর এই কথা বলিয়া নারীকে মৃতপতির পার্শ্ব হইতে উঠাইয়া আনিবেন—

তামুত্থাপয়েদ্ দেবরঃ। অশ্বলায়ন-গৃহ্যস্থত্র ৪. ২. ১৫-১৮

ইহাতে অনুমিত হয়, দেবরই বিধবাকে লইয়া ঘর করিত। ‘দেবর’ কথার মধ্যেও দ্বিতীয় বরত্ব সূচিত হয়। যাস্কই বলিয়াছেন—

দেবরঃ কস্মাদ দ্বিতীয়ো বরঃ। নিরুক্ত ৩.১৫

 ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের এই মন্ত্রটি দেখিলে এই কথাটা আরও স্পষ্ট বুঝা যায়। বিধবা যেমন করিয়া দেবরকে, নারী যেমন পুরুষকে শয়নের দিকে টানিয়া আনে, তেমন করিয়া কে তোমাকে ঘরে ফিরাইয়া আনিবে?

কো বাং শযুত্রা বিধবের দেবরং
মর্যং ন ঘোষা কৃণুতে সধস্থ আ। ঋগ্বেদ ১০.৪.২

 দেবরের সঙ্গে পুত্রার্থ বাগদত্তা বিধবার সমাগম মনুও (৯.৬৯-৭০) ব্যবস্থা করিয়াছেন, তবে তাহা বিবাহ নহে; গুরুজনের বা তদভাবে রাজাজ্ঞায় দেবরের দ্বারা সুতোৎপত্তির বিধান নারদীয়-মনুসংহিতায় (১২.৮০; ১২. ৮৭) আছে।

 দেবর ছাড়াও অন্যলোকের সহিতও বিধবার বিবাহ দেওয়া হইত। তবে


  1. বরং ঋগ্বেদে বলা হইয়াছে পতিহীনা হইলেও এইসব নারীরা অবিধবা হইয়া সংসারে প্রবেশ করিয়া ‘সুপত্নী’ হইয়া গৃহধর্ম চারিণী হউন (১০. ১৮.৭)। পূর্বেও এই বিষয়ে কিছু বলা হইয়াছে।