পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবাহ-বন্ধন
৫৫

দেবরের বেশি দাবি ছিল। তাহাতে সংসারটা বিচ্ছিন্ন হইতে পারিত না। রামায়ণে বালির পত্নী তারার এবং রাবণ-পত্নী মন্দোদরীর দেবরের সঙ্গে বিবাহের কথা আমাদের দেশে লোক প্রচলিত। বালি শাস্ত্রনিষ্ঠ ধার্মিক ছিলেন। ব্রহ্মর্ষি-পুত্র রাবণও বেদযজ্ঞাদিপারগ ছিলেন। রাক্ষসীগর্ভোৎপন্ন হইলেও রাবণ কুম্ভকর্ণাদি ব্রাহ্মণপুত্র বলিয়া ব্রাহ্মণই ছিলেন, তাঁহাদের বধ করায় রামের ব্রহ্মহত্যা পাতক ঘটিয়াছিল। তবু বানর ও রাক্ষস নামে পরিচিত হওয়ায় তাঁহাদের নজির উল্লেখ করা হইল না।

 মহাভারতে দেখা যায়, নাগরাজ হৃতপুত্র ঐরাবতের স্নুযাতে (পুত্রবধূতে) অর্জুনের এক পুত্র জন্মে। সেই মেয়েটির স্বামী সুপর্ণের দ্বারা হৃত হইলে সন্তানহীন ঐরাবত সেই দুখিনী স্নুষাকে অর্জুনের কাছে সম্প্রদান করেন। কামবশানুগ অর্জুন সেই ঐরাবত-স্নুষাকে ভার্যারূপে গ্রহণ করেন। তাহাতেই বীর্যবান ইরাবানের জন্ম (মহাভারত ভীষ্ম ৯০. ৭-৯)। অর্জুন যখন ইন্দ্রলোকে যান তখন ইরাবান তাহা শুনিয়া অর্জুনের কাছে গিয়া বলেন, আমি ইরাবান্, তোমার পুত্র (ঐ ১২-১৩)। অর্জুন তখন গতবৃত্তান্ত স্মরণ করিয়া দেবলোকে পুত্রকে বলিলেন, যুদ্ধকালে আমাদের সাহায্য করিতে হইবে। সেই সন্তানও গুণে অর্জুনবৎ ছিলেন। অর্জুন তাহাকে আলিঙ্গন করিয়আ প্রীত হইলেন (ঐ ১৫-১৭)। পরে মহাভারত-যুদ্ধকালে ইরাবান পাণ্ডবদের সহায়তা করিয়াছিলেন (ঐ ১৭)।

 ইহাতেই বুঝা যায়, কেহ কেহ স্বামীর অনুমৃতা হইলেও অনেকে অনুমৃতা হইতেন না। ইহাদের মধ্যে অনেকে পুনরায় বিবাহও করিতেন। কাজেই বসিষ্ঠাদি ধর্মসূত্রে তাহার ব্যবস্থা দেখা যায়। বোধায়ন ধর্মসূত্র বলেন, যে কন্যা উদকপূর্বপ্রদত্তা যাহার বিবাহ-হোমাদি সম্পন্ন হইয়া গিয়াছে, এমন কন্যার স্বামী যদি মরিয়া যায় এবং যদি সে স্বামীর সঙ্গে ঘর না করিয়া থাকে তবে পৌনর্ভব-বিধিতে তাহার পুনরায় বিবাহ দিবে—

নিসৃষ্টায়াং হুতে বাপি যসৈ ভর্তা মৃয়েত সঃ।
সা চেদক্ষতযোনিঃ স্যাদ গতপ্রত্যাগতা সতী।
পৌনর্ভবেন বিধিনা পুনঃ সংস্কারমর্হতি। বোধায়ন ধর্মসূত্র, ৪. ১. ১৮

 তৈত্তিরীয়-সংহিতায় (৩. ২. ৪. ৪) ‘দৈধিষব্য’ কথা আছে। এই বিষয়ে কাত্যায়ন-শ্রৌতসূত্র (২.১.২২) এবং কৌশিক-সূত্রও (৩. ৫; ১৩৭. ৩৭)