দ্রষ্টব্য। এই কথার অর্থে ‘সেণ্টপিটারস্বর্গ ডিক্সানারী’ বলেন, ‘দিধিষু’ অর্থাৎ বিধবার পুত্র। মনিয়র উইলিয়মস্ও তাঁহার ‘অভিধানে’ বলেন “সম্ভবত নারীর দ্বিতীয় পতির ঔরসজাত পুত্র”। কিন্তু ম্যাকডোনেল ও কীথ্ তাঁহাদের ‘বৈদিককোষে’ মনে করেন, বড় ভগ্নীর পূর্বে ছোট ভগ্নীর বিবাহ হইলে তাহার সন্তানকে ‘দৈধিষব্য’ বলে।
মহাভারতে তো পাণ্ডু এবং ধৃতরাষ্ট্র পিতার ঔরসজাত নহেন। কুন্তীর ও মাদ্রীর সন্তানলাভের কথাও সর্বজনবিদিত। দ্রৌপদীর কথা উল্লেখ না-ই করিলাম। মনু তো অনেক পরে লিখিত এবং মনুস্মৃতি খুব রক্ষণশীল, তবু তাহাতেও আছে—
·······বিধবা বা স্বয়েচ্ছয়া।
উৎপাদয়েৎ পুনর্ভূত্বা স পৌনর্ভব উচ্যতে॥ ৯. ১৭৫
বসিষ্ঠ-স্মৃতি মতেও, যে কৌমার-পতি ত্যাগ করিয়া অন্য পতি ও পতিকুল আশ্রয় করে বা পতি মৃতে যদি পত্যন্তর গ্রহণ করে তবে সে নারী পুনর্ভূ, তাহার সন্তান পৌনর্ভব (বসিষ্ঠ-স্মৃতি, আনন্দাশ্রম স্মৃতিসমুচ্চয়, ১৭. ২০-২১)। বসিষ্ঠ-স্মৃতিতে ক্লীব পতিত বা উন্মত্ত প্রথম স্বামীকে ত্যাগ করিয়া পত্যন্তর গ্রহণ করিলেও সেই নারীকে পুনর্ভূ বলা হইয়াছে (ঐ ১৭.২০)। যাজ্ঞবল্ক্যও বলেন, স্বামীর সঙ্গে ঘর করিয়াও স্বেচ্ছায় যে স্বামীকে ত্যাগ করিয়া আবার বিবাহ করে সে পুনর্ভূ, তবে সজাতীয় কাহাকেও বিবাহ করিতে হইবে, অন্য জাতি হইলে চলিবে না—
অক্ষতা বা ক্ষতা চৈব পুনর্ভূঃ সংস্কৃতা পুনঃ।
স্বৈরিণী যা পতিং হিত্বা সবর্ণং কামতঃ শ্রয়েৎ। ১.৬৭
এইরূপ বিবাহ যে যাজ্ঞবল্ক্যের মনঃপুত নহে তাহা বুঝাই যাইতেছে। তবে ইচ্ছা না থাকিলেও বিরক্তির সহিত তিনি যে এইরূপ প্রথার উল্লেখ করিয়াছেন, ইহাতে বুঝা যায় তাহা সমাজে যে চলিতেছিল তাহা অস্বীকার করিবার উপায় ছিল না। নারদীয়-মনুসংহিতায়ও তিন প্রকারের পুনর্ভূর (১২. ৪৫-৪৮) এবং চারি প্রকারের স্বৈরিণীর (১২. ৪৯-৫২) লক্ষণ দেওয়া হইয়াছে।
ক্রমে স্মৃতির যুগে বিবাহের কড়াকড়ি বাড়িয়াছে। নারীদের অধিকার সংকুচিত হইয়াছে তবু পুরাতন এইসব প্রথা তখনও যে লুপ্ত হয় নাই, তাহা বুঝা যায় তাঁহাদের বিরক্তিসহ, এমন কি অনেকস্থলে তিরস্কারসহ, এইসব ব্যবস্থার উল্লেখের দ্বারা।