৭০. ২৬)। দময়ন্তীর এই দ্বিতীয় স্বয়ম্বর যে অদ্ভুত কিছু ছিল না তাহা বুঝি সেই সভায় রাজারা সবাই আসিলেন।
মনুর সময়ে নারীদের প্রাচীন অধিকার অনেকটা সংকুচিত হইয়া আসিতেছিল। পূর্বে দোষ থাকিলে পতি পত্নীকে, এবং পত্নী পতিকে যে ত্যাগ করিতে পারিতেন তাহাতেও পতি হইতে পত্নীর অধিকার কম ছিল। মনুর সময়ে ততটুকু অধিকারও আর রহিল না। নিয়ম ছিল, পতি বিদেশে যাইবার সময় স্ত্রীর বৃত্তিব্যবস্থা করিয়া যাইবেন (মনু ৯.৭৪)। যদি বৃত্তি না থাকে তবে সুতা কাটিয়া বা অনিন্দিত শিল্পের দ্বারা স্ত্রী জীবিকা সংগ্রহ করিবেন (ঐ ৯.৭৫)। ধর্মার্থ বিদেশগত পতির জন্য স্ত্রী আট বৎসর, বিদ্যা বা যশোলাভার্থ-গত পতির জন্য ছয় বৎসর, কামার্থগত পতির জন্য তিন বৎসর প্রতীক্ষা করিবেন (ঐ ৭.৯. ৭৬)। তার পর স্ত্রী যে কি করিবেন তাহা মনু লেখেন নাই। তাহার পর স্ত্রীর কর্তব্য কি তৎসম্বন্ধে মনুর টীকাকারদের মধ্যে সর্বজ্ঞ নারায়ণ, কুল্লূক ও রাঘবানন্দ, বসিষ্ঠ-স্মৃতির অনুসারে স্বামীর কাছে স্ত্রী যাইবেন এইরূপ বলিয়াছেন। শুধু নন্দন ব্যবস্থা করিয়াছেন—
ঊর্ধ্বং ভর্ত্রন্তরপরিগ্রহে ন দোষোঽস্তি ইতি অভিপ্রায়ঃ।
অর্থাৎ ইহার পর স্ত্রীর পক্ষে পত্যন্তর গ্রহণ ছাড়া আর কি উপায় আছে? কিন্তু মেধাতিথি তাহাও সমর্থন করেন নাই।
দ্বেষ-পরায়ণা স্ত্রীকে মনু (৯.৭৭) এক বৎসরের পরই পরিত্যাগ করিবার বিধান দেন। মদ্যরতা, দুশ্চরিত্রা, ব্যাধিতা, পতিবিদ্বেষিণী স্ত্রীকে ত্যাগ করিয়া পতি পত্ন্যন্তর গ্রহণ করিবেন (৯. ৮০)। বন্ধ্যা, মৃতবৎসা, কন্যামাত্রপ্রসবিনী, অপ্রিয়ভাষিণী হইলেও মনুর মতে (৯. ৮১) স্ত্রী ত্যাজ্যা। তবে পীড়িতা সুশীলা স্ত্রীর কাছে অনুমতি লইয়া স্বামী বিবাহ করিবে (৯.৮২)। স্ত্রী যদি রোষবশতঃ চলিয়া যাইতে চাহে তবে তাহাকে তৎক্ষণাৎ বর্জন করিবে (৯. ৮৩)। ব্যাধিতা, বিগর্হিতা, বিপ্রদুষ্টা এবং প্রতারণা পূর্বক গছাইয়া দেওয়া কন্যাও বর্জন করিবে (৯, ৭২)। কাজেই পতির পক্ষে স্ত্রীত্যাগ মনুর হিসাবে খুবই সহজ। পত্নীদের পক্ষে পতিত্যাগ প্রায় অসাধ্য। পুরাতন যেসব অধিকার নারীদের ছিল, মনুর সময়ে তাহা প্রায় লুপ্ত হইয়া আসিয়াছিল। যাজ্ঞবল্ক্য (১. ৭২) বিধান করেন, ব্যভিচারে গর্ভ হইলে এবং ভর্তৃবধ-প্রবৃত্তি থাকিলে স্ত্রীকে ত্যাগ করিবে। নারদও তাহাই বলেন (নারদীয়-মনু ১২.৯৪)।