পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবাহ-বন্ধন
৫৯

 কিন্তু একসময়ে বিবাহবন্ধন পুরুষ ও নারী উভয়ের পক্ষেই রীতিমত বন্ধন ছিল। অতিপ্রাচীন আইনগ্রন্থ কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র (৩. ৩. ২২) বলেন, অষ্টপ্রকার বিবাহের মধ্যে ব্রাহ্ম, দৈব, আর্য ও প্রাজাপত্য এই চারিপ্রকার বিবাহবন্ধন ইচ্ছা করিলেই ছিন্ন করা যায় না—

অমোক্ষো ধর্মবিবাহানাম্ ইতি।

—কাহারও পক্ষে তাহা সহজে ছিন্ন করার উপায় ছিল না। কিন্তু স্ত্রী যদি সাধ্বী না হয় তবে বর্ণান্তরের সংস্পর্শ হইতে পারে, এই মনে করিয়া জাতিভেদ যখন প্রবল হইল তখন এই বিষয়ে আইন একটু কড়া হইল, অর্থাৎ স্ত্রীর চরিত্র বিষয়ে সন্দেহ থাকিলে ত্যাগ করা চলিবে এইরূপ বিধান সহজতর হইল। ব্যভিচারেও সবর্ণার সঙ্গে কিংবা নিম্নতর বর্ণার সঙ্গে ব্যভিচার ঘটিলে দোষ কম হইত।[১]

 আসলে পতিপত্নীসম্বন্ধ সহজে ছেদ্য নয় (নারদ ১২. ৯২)। এক সময়ে নারীদের নৈতিক বিষয়ে সামাজিক কড়াকড়ি কম ছিল। বসিষ্ঠ-স্মৃতি তো স্পষ্টই বলেন, ব্যভিচারে নারী দূষিত হয় না (২৮. ১)।

 এই কথায় চমকাইলে চলিবে না। এমন সময়ও ছিল যখন বিবাহ প্রথাই প্রবর্তিত হয় নাই। তখন নরনারী যথেচ্ছ বিহারের দ্বারা সন্তানলাভ করিত—

অনাবৃতাঃ কিল পুরা স্ত্রিয় আসন্ বরাননে।
কামচারবিহারিন্যঃ স্বতন্ত্রাশ্চারুহাসিনি। মহাভারত, আদি, ১২২, ৪

তাহাদের এই ব্যভিচারে তখন অধর্ম হইত না, ইহাই পূর্বে ধর্ম ছিল—

নাধর্মোঽভুদ বরারোহে স হি ধর্মঃ পুরাভবৎ। ঐ ১২২, ৫

 রাজা পাণ্ডুর সময়েও এই ধর্ম উত্তরকুরুতে চলিত ছিল (ঐ ১২২. ৭)। এই সনাতনধর্মই স্ত্রীগণের প্রতি অনুগ্রহকর—

স্ত্রীণামনুগ্রহকরঃ স হি ধর্মঃ সনাতনঃ। ঐ ১২২. ৮

 এখানে টীকাকার নীলকণ্ঠ (ঐ টীকা) বলেন, বেদমতে বামদেব্যব্রতচারিণী নারী সঙ্গম প্রার্থনা করিলে তাহা পূরণ করাই ধর্ম।

 উদ্দালক-পত্নীকে এক ব্রাহ্মণ সঙ্গমার্থ হঠাৎ ‘চল যাই’ বলিয়া লইয়া গেলে পুত্র শ্বেতকেতু ক্রোধে অগ্নিমূর্তি হইলেন (ঐ ১২২. ১০-১২)। উদ্দালক বলিলেন, বাছা, রাগ করিও না, ইহাই সনাতন ধর্ম। সর্ব বর্ণের নারীরাই অনাবৃতা—


  1. বৃহদ্-যম, ৪.৪৬-৪৮; বসিষ্ঠ-স্মৃতি ২১ অধ্যায়; বৃদ্ধহারীত ৯, ৩১৬