দ্বারা বলপূর্বক গৃহীতা নারী গর্ভবতী না হইলে তিন রাত্রিতে শুদ্ধি; যদি গর্ভ হয়, তবে শুদ্ধি হইবে কৃচ্ছ্রসাংতপন এবং ঘৃতলেপের দ্বারা (ঐ, ৪৭-৪৯)। অসবর্ণ পুরুষের দ্বারা গর্ভ হইলে গর্ভমুক্তির পর রজোদর্শন হইলেই তপ্তকাঞ্চনের মত নারীর শুদ্ধি হয় (ঐ ৫০-৫১)। সেই সময়ে ম্লেচ্ছদের দ্বারা হৃতা হইয়া দীর্ঘকাল যেসব নারীর ম্লেচ্ছদের সঙ্গে থাকিতে হইত তাঁহাদের প্রায়শ্চিত্তের কথাও দেবল ইহার পর বিচার করিয়াছেন। এই বিষয়ে যাঁহার জানিবার ইচ্ছা তিনি মূলগ্রন্থে তাহা দেখিতে পারেন।
এই স্মৃতিসমুচ্চয়ে বৃহদ্-যমসংহিতায় দেখা যায়, নারীদের ব্যভিচার হইলে ঋতুস্রাব হইলেই শুদ্ধি হয়। তবে গর্ভ হইলে স্ত্রীত্যাগ করা যায়, অন্যথা স্ত্রীত্যাগ যুক্ত নহে—
ব্যভিচারাদ্ ঋতৌ শুদ্ধিঃ স্ত্রীণাং চৈব ন সংশয়ঃ।
গর্ভে জাতে পরিত্যাগো নান্যথা মম ভাষিতম্॥ বৃহদ্-যম. ৪. ৩৬
জার-দোষে নারীরা দূষিত হয় না, এই কথা বসিষ্ঠ যে বলিয়াছেন তাহা আগেই দেখানো হইয়াছে (বসিষ্ঠ, ২৮. ১)। নারীরা দেবতার প্রসাদে সর্বকল্মষের অতীত (বসিষ্ঠ, ২৮.৬)। তবে এই তিনটি পাপ হইলে নারী পতিত হয়— পতিবধ, ভ্রূণহত্যা ও নিজের গর্ভপাত (বসিষ্ঠ, ২৮. ৭)। নারদীয় মনুতে (১২. ৯৪-৯৬) অনুরূপ কয়েক স্থলে স্ত্রীকে নির্বাসন দণ্ড দিবার ব্যবস্থা আছে।
নারদীয় মনু অতি প্রাচীন শাস্ত্র। ইহাতে পাণিগ্রহণ সংস্কারের ফল সারাজীবন থাকে (১২.৩)। পতিপত্নীর বিবাহবিচ্ছেদ বিহিত হয় না। তবে ব্যভিচার-দোষে বন্ধনছেদন হইতে পারে (১২.৯২)। বিনাদোষে স্ত্রী-ত্যাগে পতি দণ্ডার্হ (ঐ ১২. ৯৭)। কাজেই দেখা যায়, সহজে স্ত্রীত্যাগের উপদেশ সকলে দেন নাই। বৌধায়ন-স্মৃতি (২. ২.৬৫) দেবতার প্রসাদে নারীকে নিষ্কলঙ্কা বলিয়াছেন, কিন্তু বন্ধ্যা স্ত্রীকে দশম বৎসরে, কন্যামাত্রপ্রসবিনীকে দ্বাদশে, মৃতপ্রজাকে পঞ্চদশে এবং অপ্রিয়বাদিনীকে সদ্য ত্যাগ করিতে বিধান দিয়াছেন।
প্রাচীন ঋষিদের মতে বিবাহ পতিপত্নীর একটা সম্বন্ধ যাহা পবিত্র। তাহা সহজে ছেদ্য নয়। তবে কারণ-বিশেষে ছেদন করিবার ব্যবস্থা পুরুষকে কেহ কেহ দিয়া থাকেন, অথচ অনেক সময় অনেকেই সেই অধিকার নারীকে দেন নাই।