দ্রাবিড়-সমাজের মত আর্যদের সমাজ ও সামাজিক ব্যবস্থা মাতৃতন্ত্র না হইলেও আর্যদের মধ্যে বৈদিকযুগে নারীদের বেশ প্রতিষ্ঠা ও সম্মান ছিল, কাজেই তাঁহাদের অধিকারও অনেকটা বিস্তৃত ছিল। আদর্শ হিসাবেও তাঁহাদের স্থান বেশ উচ্চ ছিল। তাই নারীদিগকে ‘নিষ্কল্মষা’ ‘মেধ্যা’ প্রভৃতি বলা হইয়াছে। এবং সহজে কোনো দোষে তাঁহাদের পরিত্যাগ করা অনেকেই পছন্দ করেন নাই, তাহা এইমাত্র দেখানো হইল। নারী হইলেন পত্নী, পতিকুলে তিনি সম্রাজ্ঞী, পত্নী-বিনা যজ্ঞ অসাধ্য— এই সবই জানা কথা। শ্রীরামচন্দ্র সীতাকে লোকাপবাদভয়ে ত্যাগ করিলেও স্বর্ণসীতাকে পাশে রাখিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। অর্থাৎ ক্রমে এমন একটা যুগ আসিল যখন আসল নারীকে নির্বাসন দিয়া তাঁহাদের সম্বন্ধে বড় বড় কথা স্বর্ণসীতার মত বামে রাখিয়া সমাজ চলিতে লাগিল।
বাৎস্যায়ন বলিয়াছেন—
কুসুমধর্মাণো হি ঘোষিতঃ সুকুমারোপক্রমাঃ। কামসূত্র, ১৭ অধ্যায়, পৃ ১৯৯
অর্থাৎ নারীরা কুসুমবৎ সুকুমার, কাজেই তাহাদের প্রতি ব্যবহারও সুকুমার হওয়া চাই। সহৃদয়তার সহিত নারীদের সহিত ব্যবহার করা চাই। বাৎস্যায়ন লিখিতেছেন কামশাস্ত্র। কাজেই এখানে তাঁহার বাক্য উদ্ধৃত করিয়া লাভ নাই। তবে এই বিষয়ে সৌভাগ্যক্রমে আমাদের ধর্মশাস্ত্র-ব্যবস্থাপকেরাও একমত। যেসব কর্কশ ও পরুষ দণ্ড পুরুষের প্রতি তাঁহারা বিধান করিয়াছেন, তাহা তাঁহারা অনেকেই নারীদের প্রতি ব্যবহার করিতে দেন নাই। ঐ বিষয়ে প্রাচীন শাস্ত্রকারেরা সকলেই নারীদের প্রতি সহৃদয়তার কথা বলিলেও দায় ও সামাজিক ব্যবহার প্রকরণে সকলে সমান উদার মত দেখাইতে পারেন নাই। স্মৃতিকারেরা নারীদের স্থানবিশেষে নিন্দা করিলেও নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন যে কর্তব্য সে কথা প্রায় সকলেই বলিয়াছেন। মনু (২. ১২৩) প্রভৃতি সমাজপতিরা নারীদের প্রতি সশ্রদ্ধ ব্যবহারের ব্যবস্থা দিয়াছেন। এখানে মেধাতিথি ও কুল্লুকভট্টও সমর্থন করিয়াছেন। মনু (২. ১৩১-১৩৩) নারীদের প্রতি সম্পর্ক ও বয়সের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া এবং উচ্চজাতীয়াদের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত, যেন সেই ভাবেই বেশি বলিয়াছেন। নিঃসম্পর্ক নারীকে ভগিনী বা সুভগা বলিয়া সম্বোধন করিবে