পাতা:বঙ্কিম-প্রসঙ্গ.djvu/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিমচন্দ্র ১ ৭৩ উপদেশ দিতে লাগিলেন, জন্মভূমিকে মা বলিতে শিখাইলেন, হিন্দুর যত দেব-দেবী আছেন, সবই এক মায়ের প্রতিমূৰ্ত্তি-এই শিক্ষা দিতে লাগিলেন। সকলকে বলিতে লাগিলেন, একবার প্রাণ ভরে বল—‘বন্দে মাতরম্ । ইহার পর বঙ্কিমবাবু যতগুলি নভেল লিখিয়াছেন, দেশভক্তিই তাহাদের মূলমন্ত্র। আর সেই সঙ্গে সঙ্গে হিন্দুধৰ্ম্মের প্রচারও ছিল। কিন্তু সে হিন্দুধৰ্ম্ম তাহার নিজের মনের মত। তিনি নিজে ভগবগীতার টীকা করিয়া সেইমত হিন্দুধৰ্ম্ম চালাইতে গেলেন। এই সময়ে শশধর তর্কচূড়ামণির সঙ্গে তাহার বিবাদ বাধিল । বঙ্কিমচন্দ্র বলিলেন, খাওয়ার বাধাৰ্বাধি বা ছোয়ার বাধাবাধি লইয়া ধৰ্ম্ম নয়। ধৰ্ম্ম আর এক জিনিস। র্তাহার ধৰ্ম্ম যে কি ছিল, তাহার কতক আভাস র্তাহার কৃষ্ণচরিত্রে ও অনুশীলনে পাওয়া যায়। একটা পূর্ণ ধৰ্ম্মের পথ তিনি দেখাইবেন বলিয়া আশা করিয়াছিলেন। র্তাহার সে আশা পূর্ণ হইল না, মৃত্যু অকালে তাহাকে গ্রাস করিল। বঙ্কিমবাবু যাহা কিছু করিয়াছেন, ইচ্ছায় করুন বা অনিচ্ছায় করুন, জানিয়া করুন বা না জানিয়া করুন—সব গিয়া এক পথে দাড়াইয়াছে। সে পথ জন্মভূমির উপাসনা—জন্মভূমিকে মা বলা—জন্মভূমিকে ভালবাসা—জন্মভূমিকে ভক্তি করা। তিনি এই যে কাৰ্য্য করিয়াছেন, ইহা ভারতবর্ষের আর কেহ করে নাই। সুতরাং তিনি আমাদের পূজ্য, তিনি আমাদের নমস্ত, তিনি আমাদের আচাৰ্য্য, তিনি আমাদের ঋষি, তিনি আমাদের মন্ত্রকৃৎ, তিনি আমাদের মন্ত্রগ্রষ্ট। সে মন্ত্র-বন্ধে মাতরম্।