পাতা:বঙ্কিম চন্দ্রের দীনবন্ধু-জীবনী.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । RS অনেক পূৰ্ব্ব হইতেই উদ্যোগ ও সংস্কল্প করিয়া আসিতেছিলেন, দীনবন্ধুর পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী “পুরাণ দলের শেষ কবি” ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তও তাহা জানিতেন। গুপ্ত কবি তঁহার অবজ্ঞার জিনিসটা একটা দূরে শোনা কথা বলিয়া উড়াইয়া দেন। নাই ; তিনি তাহার বিরুদ্ধে কলম ধরিয়া পরিহাস কয়িয়া লিখিয়াছিলেন,- “আগে মেয়েগুলো ছিল ভাল ব্ৰত ধৰ্ম্ম কবুত সবে ; একা বেথুন এসে শেষ করেছে, আর কি তাদের তেমন পাবে ? যত ছুড়িগুলো তুড়ি মেরে কেতাব হাতে নিচ্চে যবে, তখন এ, বি, শিখে বিবি সেজে বিলাতী বোলু কবেই কবে।“ দীনবন্ধু বহুদশী ছিলেন ; সকল শ্রেণীর লোকের সহিতই তিনি মিশিতেন ; এ কথা বঙ্কিম বাবু বার বার লিখিয়াছেন। যে সকল পরিবারে “ধেড়ে মেয়ে” পোষা ও স্ত্রীশিক্ষা চলিতেছিল, সে সকল পরিবারের অনেকগুলির সহিতই দীনবন্ধুর মিত্ৰতা ছিল। ইহার প্রমাণ যথেষ্ট আছে। তবে সুরধুনী কাব্যখানির সাক্ষ্যেই সে কথা বলিতে পারি। যাহা প্ৰচলিত হইতে আরম্ভ হইয়াছিল, তাহা অতি অল্পসংখ্যক পরিবারে বদ্ধ ছিল বলিয়াই যে নাটকের প্রতিপাদ্য নহে, তাহ কেহ বলিতে পারেন না। এই যে নুতন শিক্ষার স্রোতে নুতন ভাব ধীরে ধীরে সমাজে প্ৰবেশ করিতেছিল, তাহার শুভ অশুভ ফলের কথা সকলেই ভাবিতেন। সেই নূতনত্বটুকু প্ৰাচীন সমাজের মধ্যে খাপ খাইতেছিল কি না, শিক্ষার ফলে প্ৰাচীনতার দিকে নূতনের কি প্রকার দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতেছিলেন, এ কথা নাটকের বিশেষ আখ্যানবস্তু মনে করি ঐ প্রথা যদি অবজ্ঞার জিনিসও হয়, তবুও উহার একটা প্রভাব সমাজের উপর যে ভাবে পড়িতেছিল, তাহাও প্ৰদৰ্শিত হইতে পারে। লীলাবতীকে হিন্দুর ঘরে ঠিক হিন্দুর মেয়ের মতই দেখিতে পাই। তবে সে লেখা পড়া শিখিয়াছে, এবং শৈশব অতীত হইবার পূৰ্ব্বে বিবাহিত হয় নাই। ঠিক এই অবস্থায় হিন্দুর ঘরে ও কৌলীন্য প্রথার মাঝখানে, প্ৰাকৃতিক ভাবে যাহা ঘটিতে পারে, দীনবন্ধুর গ্রন্থে তাহাই বর্ণিত দেখি। দীনবন্ধু ঐ প্ৰথাকে অবজ্ঞার জিনিস মনে করেন নাই বলিয়া, “ধেড়ে মেয়ে” গোছের কথাগুলি, গুলির আডিডার লোকের মুখেই দিয়াছেন। বিরোধ-বাদেও দীনবন্ধু শিষ্টাচারের পরিহাস করিতেন না ; ভদ্রলোকের মেয়ের কথা সসম্মানেই উল্লেখ করিতেন । ললিতমোহন ও লীলাবতীতে বিলাতী ধরণের কোর্টসিপাচলিত এ কথা