পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী না। কতকটা হিন্দধমের দোষ; যে ধৰ্ম্মানসারে উৎকৃষ্ট মৰ্ম্মমরপ্রস্তুত হম্মমৰ্য্যও গোময় লেপনে পরিস্কৃত করিতে হইবে, তাহার প্রসাদে সক্ষম শিলেপির দন্দীশারই সম্ভাবনা। এ সকল স্বীকার করিলেও দোষক্ষালন হয় না। যে ফিরিঙ্গি কেরাণীগিরি করিয়া শত মাদ্রায় কোন মতে দিনপাত করে, তাহার সঙ্গে বৎসরে বিংশতি সহস্র মাদ্রার অধিকারী গ্রাম্য ভূস্বামীর গহপারিপাট্য বিষয়ে তুলনা কর। দেখিবে, এ প্রভেদটি অনেকটাই স্বাভাবিক। দই চারি জন ধনাঢ্য বাবা, ইংরেজাদিগের অন্যাকরণ করিয়া, ইংরেজের ন্যায় গহ্যাদির পারিপাট্য বিধান করিয়া থাকেন এবং ভাস্কৰ্য্য ও চিত্রাদির দ্বারা গহ সজিত করিয়া থাকেন। বাঙ্গালি নকলনবিশ ভাল, নকলে শৈথিল্য নাই। কিন্তু তাঁহাদিগের ভাস্কৰ্য্য এবং চিত্রসংগ্ৰহ দেখিলেই বোধ হয় যে, অন্যাকরণ-সপহাতেই ঐ সকল সংগ্রহ ঘটিয়াছে-নচেৎ সৌন্দয্যে তাঁহাদিগের আন্তরিক অনােরাগ নাই। এখানে ভাল-মন্দের বিচার নাই, মহাঘ্য হইলেই হইল ; সন্নিবেশের পারিপাট্য নাই, সংখ্যায় অধিক হইলেই হইল। ভাস্কৰ্য চিত্র দরে থাকুক, কাব্য সম্পবন্ধেও বাঙ্গালির উত্তমাধ্যম বিচারশক্তি দেখা যায় না। এ বিষয়ে সশিক্ষিত অশিক্ষিত সমান-প্ৰভেদ আতি অলপ। নিত্য গীত-সে সকল বঝি বাঙ্গালা হইতে উঠিয়া গেল। সৌন্দৰ্য্যবিচারশক্তি, সৌন্দৰ্য্যরসাত্সবাদনসখি, বঝি বিধাতা বাঙ্গালির কপালে লিখেন নাই। দ্ৰৌপদী (ෂ්ඤaí Olෂ්F) কি প্রাচীন, কি আধনিক, হিন্দকাব্য সকলের নায়িকাগণের চরিত্র এক ছাঁচে ঢালা দেখা যায়। পতিপরায়ণা, কোমলপ্ৰকৃতিসম্পন্না, লডজাশীলা, সহিষ্ণতা গণের বিশেষ অধিকারিণী— ইনিই আৰ্যসাহিত্যের আদশস্থলাভিষিক্তা। এই গঠনে বদ্ধ বালিমীকি বিশ্বমনোমোহিনী জনকদহিতাকে গড়িয়াছিলেন। সেই অবধি আৰ্য নায়িকা সেই আদশে গঠিত হইতেছে। শকুন্তলা, দময়ন্তী, রত্নাবলী প্রভৃতি প্ৰসিদ্ধ নায়িকাগণ-সীতার অন্যাকরণ মাত্র। অন্য কোন প্রকৃতির নায়িকা যে আৰ্যসাহিত্যে দেখা যায় না, এমত কথা বলিতেছি না-কিন্তু সীতানবৰ্ত্তিনী নায়িকার বাহল্য। আজিও যিনি সস্তা ছাপাখানা পাইয়া নবেল নাটকাদিতে বিদ্যা প্রকাশ করিতে চাহেন, তিনিই সীতা গড়িতে বসেন। ইহার কারণও দািরনমেয় নহে। প্রথমতঃ সীতার চরিত্রটি বড় মধর, দ্বিতীয়তঃ এই প্রকার স্ত্রীচরিত্রই আৰ্যজাতির নিকট বিশেষ প্রশংসিত, এবং তৃতীয়তঃ আৰ্যসত্ৰীগণের এই জাতীয় উৎকর্ষই সচরাচর আয়ত্ত । একা দ্ৰৌপদী সীতার ছায়াও সপশ করেন নাই। এখানে মহাভারতকার অপবর্ণ নািতন সন্টি প্রকাশিত করিয়াছেন। সীতার সহস্ৰ অন্যাকরণ হইয়াছে, কিন্তু দ্ৰৌপদীর অন্যাকরণ হইল না। সীতা সতী, পশুপতিকা দ্ৰৌপদীকেও মহাভারতকার সতী বলিয়াই পরিচিতা করিয়াছেন; কেন না, কবির অভিপ্রায় এই যে, পতি এক হৌক, পাঁচ হোক, পতিমাত্ৰ ভজনাই সতীত্ব। উভয়েই পত্নী ও রাজ্ঞীর কত্ত ব্যানািচ্ঠানে অক্ষান্নমতি, ধৰ্ম্মমনিষ্ঠা এবং গরজনের বাধ্য। কিন্তু এই পৰ্যন্ত সাদশ্য। সীতা রাজ্ঞী হইয়াও প্রধানতঃ কুলবধ, দ্ৰৌপদী কুলবধ হইয়াও প্রধানতঃ প্রচন্ড তেজস্বিনী রাজ্ঞী। সীতায় সত্ৰীজাতির কোমল গণগলিন পরিস্ফাট, দ্রৌপদীতে স্ত্ৰীজাতির কঠিন গণসকল প্রদীপ্ত। সীতা রামের যোগ্য জায়া, দ্ৰৌপদী ভীমসেনেরই সংযোগ্য বীরেন্দ্রাণী। সীতাকে হরণ করিতে রাবণের কোন কষ্ট হয় নাই, কিন্তু রক্ষোরাজ লঙ্কেশ। যদি দ্ৰৌপদীহরণে আসিতেন, তবে বোধ হয়, হয় কীচকের ন্যায় প্রাণ হারাইতেন, নয় জয়দ্রথের ন্যায়, দ্ৰৌপদীর বাহবিলে ভুমে গড়াগড়ি দিতেন। দ্ৰৌপদীচরিত্রের রীতিমত বিশ্লেষণী দরহে; কেন না, মহাভারত অনন্ত সাগরতুল্য, তাহার অজস্র তরঙ্গাভিঘাতে একটি নায়িকা বা নায়কের চরিত্র তৃণবৎ কোথায় যায়, তাহা পৰ্যবেক্ষণ কে করিতে পারে! তথাপি দাই একটা স্থানে বিশ্লেষণে যত্ন করিতেছি। দ্ৰৌপদীর সদ্বয়ম্বর। দুপদরাজার পণ যে, যে সেই দিবোিধনীয় লক্ষ্য বিধিবে, সেই দ্ৰৌপদীর পাণিগ্রহণ করিবে। কন্যা সভাতলে আনীতা। পথিবীর রাজগণ, বীরগণ, ঋষিগণ সমবেত । এই মহাসভার প্রচণ্ডড প্রতাপে কুমারীকুসমে শকাইয়া উঠে; সেই বিশোষ্যমাণ কুমারী লাভার্থ ఏఏ8