পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোক রহস্য তদাসবাদনাথ মন্ডপ-মধ্যে প্রবিষ্ট হইলাম। ঐ মন্ডপ ভৌতিক-পশ্চাৎ জানিয়াছি, মনষ্যেরা উহাকে ফাঁদ বলে। আমার প্রবেশ মাত্র আপনা হইতে তাহার দ্বার রদ্ধ হইল। কতকগলি মনকেষ্য তৎপরে সেইখানে উপস্থিত হইল। তাহারা আমার দশন পাইয়া পরমানন্দিত হইল, এবং আহাদসচক চীৎকার, হাস্য, পরিহাসাদি করিতে লাগিল। তাহারা যে আমার ভূয়সী প্রশংসা করিতেছিল, তাহা আমি বঝিতে পারিয়াছিলাম। কেহ আমার আকারের প্রশংসা করিতেছিল, কেহ আমার দন্তের, কেহ নখের, কেহ লাঙ্গলের গণগান করিতে লাগিল। এবং অনেকে আমার উপর প্রীত হইয়া, পত্নীর সহোদরকে যে সম্বোধন করে, আমাকে সেই প্রিয়াসক্ষেবাধন করিল। পরে তাহারা ভক্তিভাবে আমাকে মগডপ-সমেত সকন্ধে বহন করিয়া, এক শকটের উপর উঠাইল । দই অমলশ্বেতকান্তি বলদ ঐ শকট বহন করিতেছিল। তাহাদিগকে দেখিয়া আমার বড় ক্ষধার উদ্রেক হইল। কিন্তু তৎকালে ভৌতিক মন্ডপ হইতে বাহির হইবার উপায় ছিল না, এ জন্য অদ্ধভূক্ত ছাগে তাহা পরিতৃপ্ত করিলাম। আমি সখে শকটারোহণ করিয়া ছাগমাংস ভক্ষণ করিতে করিতে এক নগরবাসী শ্বেতবাণ মনষ্যের আবাসে উপস্থিত হইলাম। সে আমার সম্পমানার্থ স্বয়ং দ্বারদেশে আসিয়া আমার অভ্যর্থনা করিল। এবং লৌহদণ্ডডাদিভূষিত এক সরম্য গহমধ্যে আমার আবাসস্থান নির্দেশ করিয়া দিল। তথায় সজীব বা সদ্য হত ছাগ মেষ গবাদির উপাদেয় মাংস শোণিতের দ্বারা আমার সেবা করিত। অন্যান্য দেশবিদেশীয় বহতর মনষ্যে আমাকে দর্শন করিতে আসিত, আমিও বঝিতে পারিতাম যে, উহারা আমাকে দেখিয়া চরিতাৰ্থ হইত। আমি বহকাল ঐ লৌহজালাবত প্রকোন্ঠে বাস করিলাম। ইচ্ছা ছিল না যে, সে সখি ত্যাগ করিয়া আর ফিরিয়া আসি। কিন্তু সবদেশ-বাৎসল্য প্রযক্ত থাকিতে পারিলাম না। আহা! যখন এই জন্মভূমি আমার মনে পড়িত, তখন আমি হাউ হাউ করিয়া ডাকিতে থাকিতাম। হে মাতঃ সন্দরবন! আমি কি তোমাকে কখন ভুলিতে পারিব ? আহা! তোমাকে যখন মনে পড়িত, তখন আমি ছাগমাংস ত্যাগ করিতাম, মেষমাংস ত্যাগ করিতাম ! (অর্থাৎ অস্থি এবং চক্ষম মাত্র ত্যাগ করিতাম)-এবং সব্বদা লাঙ্গালাঘাতের দ্বারা আপনার অন্তঃকরণের চিন্তা লোককে জানাইতাম। হে জন্মভূমি! যতদিন আমি তোমাকে দেখি নাই, ততদিন ক্ষধা না পাইলে খাই নাই, নিদ্ৰা না আসিলে নিদ্রা যাই নাই। দঃখের অধিক পরিচয় আর কি দিব, পেটে যাহা ধরিত, তাহাই খাইতাম, তাহার উপর আর দই চারি সের মাত্র মাংস খাইতাম। আর খাইতাম না।” তখন বহল্লাঙ্গল মহাশয়, জন্মভূমির প্ৰেম অভিভূত হইয়া অনেকক্ষণ নীরব হইয়া রহিলেন। বোধ হইল, তিনি অশ্রপাত করিতেছিলেন, এবং দই এক বিন্দ স্বচ্ছ ধারা পতনের চিহ্ন ভূতলে দেখা গিয়াছিল। কিন্তু কতিপয় যােবা ব্যাঘ্র তকী করেন যে, সে বহল্লাঙ্গলের আশ্রপতনের চিহ্ন নহে। মনষ্যালয়ের প্রচুর আহারের কথা সমরণ হইয়া সেই ব্যান্ত্রের মাখের লাল পড়িয়াছিল। লেকচােরর তখন ধৈৰ্য প্রাপ্ত হইয়া পনরাপি বলিতে আরম্ভ করিলেন, “কি প্রকারে আমি সেই স্থান ত্যাগ করিলাম, তাহা বলিবার প্রয়োজন নাই। আমার অভিপ্রায় বঝিয়াই হউক, আর ভুলক্রমেই হউক, আমার ভূত্য একদিন আমার মন্দির-মাজানান্তে দ্বারা মক্ত রাখিয়া গিয়াছিল। BDDD BB BBDB DD DBBD DBBD DDBDB BBB DDD DB DBDBD DDBBB S এই সকল বক্তান্ত সবিস্তারে বলার কারণ এই যে, আমি বহকাল মনষ্যালয়ে বাস করিয়া আসিয়াছি-মনষ্যচরিত্র সবিশেষ অবগত আছি—শনিয়া আপনারা আমার কথায় বিশেষ আস্থা করিবেন, সন্দেহ নাই। আমি যাহা দেখিয়াছি, তাহাঁই বলিব। অন্য পৰ্যটকদিগের ন্যায় অমলক উপন্যাস বলা আমার অভ্যাস নাই। বিশেষ মনষ্যেসম্পবন্ধে অনেক উপন্যাস আমরা চিরকাল শনিয়া আসিতেছি; আমি সে সকল কথায় বিশ্বাস করি না। আমরা পািব্বাপর শনিয়া আসিতেছি যে, মনষ্যেরা ক্ষদ্রজীবী হইয়াও পৰ্ব্বতাকার বিচিত্র গহ নিম্পমাণ করে। ঐরােপ পৰ্ব্বতাকার গহে। তাহারা বাস করে বটে, কিন্তু কখন তাহাদিগকে ঐরােপ গহ নিৰ্ম্মাণ করিতে আমি চক্ষে দেখি নাই। সতরাং তাহারা যে ঐরােপ গহী স্বয়ং নির্মাণ করিয়া থাকে, ইহার প্রমাণাভাব। আমার বোধ হয়, তাহারা যে সকল গহে বাস করে, তাহা প্রকৃত পৰ্ব্ববত বটে, সর্বভাবের সন্টি; তবে তাহা বহন গহাবিশিষ্ট দেখিয়া বদ্ধিজীবী মনষ্যেপশ তাহাতে আশ্রয় করিয়াছে।।*

  • পাঠক মহাশয় বহল্লাঙ্গলের ন্যায়শাদের ব্যৎপত্তি দেখিয়া বিস্মিত হইবেন না। এইরূপে তাকে মাক্ষীমলের স্থির করিয়াছেন যে, প্রাচীন ভারতবষীয়েরা লিখিতে জানিতেন না। এইরূপ তাকে জেমস