পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীমদ্ভগবদগীতা প্রথমতঃ শ্লোকত্রয়ে যে কয়টি শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে, তাহা বঝা যাউক । কাম্য কম্পেমার কথা হইতেছিল। এখনও সেই কথাই হইতেছে। কাম্যকৰ্ম্মম বিষয়িণী কথাকে আপাতশ্রতিসখকর বলা হইতেছে; কেন না, বলা হইয়া থাকে যে, এই করিলে সবগ লাভ হইবে, এই করিলে রাজ্যলাভ হইবে, ইত্যাদি। সে সকল কথা “জন্মকৰ্ম্মফলপ্ৰদ”। শঙ্কর ইহার এইরপ অৰ্থ করেন, “জন্মৈব কৰ্ম্মমণঃ ফলং জন্মকৰ্ম্মফলং, তৎ প্রদদাতনীতি জন্মকৰ্ম্মফলপ্রদা।” জন্মই কক্ষেমর ফল, যাহা তাহা প্ৰদান করে, তাহা “জন্মকৰ্ম্মফলপ্ৰদ”। শ্ৰীধর ভিন্ন প্রকার অর্থ করেন, “জন্ম চ তত্ৰ কৰ্ম্মাণি চ। তৎফলানি চ প্রদদাতনীতি।” জলম, তথা কম্পমা, এবং তাহার ফল, ইহা যে প্রদান করে। অনাবাদকেরা কেহ শঙ্করের, কেহ শ্ৰীধরের অন্যবিত্তী হইয়াছেন। দই অর্থই গ্রহণ করা যাইতে পারে। তার পর ঐ কাম্যকৰ্ম্মম বিষয়িণী কথাকে “ভোগৈশ্বয্যের সাধনভূত ক্রিয়াবিশেষবহল” বলা হইয়াছে। তাহা বঝিবার কোন কষ্ট নাই। ভোগৈশ্বৰ্য্য প্রাপ্তির জন্য ক্রিয়াবিশেষের বাহাল্য ঐ সকল বিধিতে আছে, এই মাত্র অৰ্থ । কথা এইরােপ। যাহারা এই সকল কথা বলে, তাহারা “বেদবাদীরত”। বেদেই এই সকল কাম্যকৰ্ম্মম বিষয়িণী কথা আছে--অন্ততঃ তৎকালে বেদেই ছিল; এবং এখনও ঐ সকল কম্পম বেদমলেক বলিয়াই প্ৰসিদ্ধ ও অনন্ঠেয়। যাহারা কাম্যকম্পমানরাগী, তাহারা বেদেরই দোহাই দেয়-বেদ ছাড়া “আর কিছ নাই” ইহাই বলে। অর্থাৎ বেদোক্ত কাম্যকম্পমাত্মক যে ধৰ্ম্ম, তাহা ভিন্ন আর কিছ ধৰ্ম্ম নাই, ইহাই তাহদের মত। তাহারা “কামাত্মা” বা কামনাপরবশ“সবগ পর,” অর্থাৎ সবগাই তাহদের পরমপরিষার্থ, ঈশ্বরে তাহদের মতি নাই, মোক্ষলাভে তাহাদের আকাঙক্ষা নাই। তাহারা ভোগ এবং ঐশ্বয্যে আসক্ত-সেই জন্যই সবগা কামনা করে; কেন না, সবগ একটা ভোগৈশ্বয্যের স্থান বলিয়া তাহদের বিশ্বাস আছে। কাম্যকৰ্ম্মম বিষয়ক পক্ষিপত বাক্য তাহদের মনকে মািন্ধ করিয়া রাখিয়াছে। ঈদশ ব্যক্তিরা অবিবেকী বা মড়। সমাধিতে-ঈশ্বরে চিত্তের যে অভিমাখতা বা একাগ্রতা-তাহাতে এবংবিধ বদ্ধি নিশ্চয়াত্মিকা ठू३ क्रा । শ্লোকত্ৰয়ের অর্থ এক্ষণে আমরা বঝিতে পারিতেছি। বেদে নানা কাম্য কম্পের্মর বিধি আছে; বেদে বলে যে, সেই সকল বহিপ্রকার কাম্য কম্পেমর ফলে সবগাদি বহবিধ ভোগৈশ্বৰ্য্য প্রাপ্তি হয়, সতরাং আপাততঃ শানিতে সে সকল কথা বড় মনোহারিণী। যাহারা কামনাপরায়ণ, আপনার ভোগৈশ্বৰ্য্য খাজে, সেই জন্য সবগদি কামনা করে, তাহদের মন সেই সকল কথায় মন্ধ হয়। তাহারা কেবল বেদের দোহাই দিয়া বেড়ায়, বলে-ইহা ছাড়া আর ধৰ্ম্মম নাই। তাহারা মড়ে। তাহদের বদ্ধি কখন ঈশ্বরে একাগ্র হইতে পারে না। কেন না, তাহদের বদ্ধি “বহশাখা” ও “অনন্তা”, ইহা পৰিবশ্লোকে কথিত হইয়াছে। কথাটা বড় ভয়ানক ও বিস্ময়কর। ভারতবর্ষ এই উনবিংশ শতাব্দীতেও বেদশাসিত। আজিও বেদের যে প্ৰতাপ, ব্রিটিশ গভৰ্ণমেণ্টের তাহার সহস্রাংশের এক অংশ নাই। সেই প্রাচীন কালে বেদের আবার ইহার সহস্ৰগণ প্ৰতাপ ছিল। সাংখ্যপ্রবচনকার ঈশ্বর মানেন নাঈশ্বর নাই, এ কথা তিনি মক্তকণ্ঠে বলিতে সাহস করিয়াছেন, তিনিও বেদ অমান্য করিতে সাহস করেন না-পানঃ পািনঃ বেদের দোহাই দিতে বাধ্য হইয়াছেন। শ্ৰীকৃষ্ণ মক্তকণ্ঠে বলিতেছেন, এই বেদবাদীরা মাৰ্চ, বিলাসী; ইহারা ঈশ্বর।ারাধনার অযোগ্য! ইহার ভিতরে একটা ঐতিহাসিক তত্ত্ব নিহিত আছে। তাহা বঝাইবার আগে আর দইটা একটি অন্যবাদ দেওয়া ভাল। এজন্য কালীপ্রসন্ন সিংহের মহাভারতের অনবাদকৃত অনাবাদও এ স্থলে দেওয়া গেল। উহা অবিকল অন্যবাদ। এমন বলা যায় না, কিন্তু বিশদ বটে। “যাহারা আপাতমনোহর শ্রবণরমণীয় বাক্যে অন্যরক্ত; বহবিধ ফলপ্রকাশক বেদবাকাই যাহাদের প্রীতিকার; যাহারা সবগ দি ফলসাধন কলম ভিন্ন কিছই কবীকার করে না; যাহারা কামনাপরায়ণ; কবিগাই যাহাঁদের পরমপরিষার্থ ; জন্ম কলম ও ফলপ্রদ ভোগ ও ঐশ্বয্যের সাধনভূত নানাবিধ ক্রিয়াপ্রকাশক বাক্যে যাহাঁদের চিত্ত অপহৃত হইয়াছে; এবং যাহারা ভোগ ও ঐশ্বষ্যে একান্ত সংসত্ত; সেই বিবেকহীন মািৰ্টদিগের বন্ধি সমাধি বিষয়ে সংশয়শন্য হয় না।” A RA