পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবক্ষ সৰ্পতম পরিচ্ছেদ ঃ পদ্মাপলাশিলোচনে ! তুমি কে ? কুন্দ নগেন্দ্র দত্তের সঙ্গে গোবিন্দপরে আসিল। কুন্দ নগেন্দ্রের বাড়ী দেখিয়া অবাক হইল। এত বড় বাড়ী সে কখনও দেখে নাই। তাহার বাহিরে তিন মহল, ভিতরে তিন মহল। এক একটি মহল, এক একটি বহৎ পরী। প্রথমে যে সদর মহল, তাহাতে এক লোহার ফাটক দিয়া প্রবেশ করিতে হয়, তাহার চতুৰ্কপাশে বা বিচিত্র উচ্চ লোহার রেইল। ফটক দিয়! তৃণশন্য, প্রশস্ত, রক্তবর্ণ, সনিমিত পথে যাইতে হয়। পথের দই পাশে বা গোগণের মনোরঞ্জন, কোমল নবতৃণবিশিস্ট দই খণড ভূমি। তাহাতে মধ্যে মধ্যে মন্ডলাকারে রোপিত, সকুসম পত্রপবক্ষসকল বিচিত্র পশুপপল্লবে শোভা পাইতেছে। সম্মখে বড় উচ্চ দেড়তলা বৈঠকখানা। অতি প্রশস্ত সোপানারোহণ করিয়া তাহতে উঠিতে হয়। তাহার বারেন্ডায় বড় বড় মোটা ফ্লটেড থাম ; হমমতল মৰ্ম্মমরিপ্রস্তরাবত। আলিশার উপরে, মধ্যস্থলে এক মন্ময় বিশাল সিংহ জটা লিম্বিত করিয়া, লোল জিহবা বাহির করিয়াছে। এইটি নগেন্দ্রের বৈঠকখানা। তৃণপক্ষপময় ভূমিখণডদ্বয়ের দই পাশেব, অর্থাৎ বামে ও দক্ষিণে দাই সারি একতলা কোঠা। এক সারিতে দপতরখানা ও কাছাঁর। আর এক সারিতে তোষাখানা এবং ভূতাবাগোিব বাসস্থান। ফটকের দই পাশেব দাবাররক্ষকদিগের থাকিবার ঘর। এই প্রথম মহলের নাম “কাছারি বাড়ী” । উহাের পাশে বা “পাজার বাড়ী”। পাজার বাড়ীতে রীতিমত বড় পাজার দালান ; আর তিন পাশে বর্ণ প্রথামত দোতলা চক বা চত্বর। মধ্যে বড় উঠান। এ মহলে কেহ বাস করে না। দাগোৎসবের সময়ে বড় ধর্মধাম হয়, কিন্তু এখন উঠানে টালির পাশ দিয়া ঘাস গজাইতেছে। দালান, দরদালান, পায়রায় পরিয়া পড়িয়াছে, কুঠারিসকল আসবাবে ভরা,--- চাবি বন্ধ। তাহার পাশে ঠাকুরবাড়ী। সেখানে বিচিত্র দেবমন্দির, সন্দর প্রস্তরবিশিষট “নাটমন্দির”, তিন পাশে দেবতাদিগের পাকশালা, পাজারীদিগের থাকিবার ঘর এবং অতিথিশালা। সে মহলে লোকের অভাব নাই। গলায় মালা চন্দনীতিলকবিশিস্ট পাজারীর দল, পাচকের দল ; কেহ। ফলের সাজি লইয়া আসিতেছে, কেহ ঠাকুর স্নান করাইতেছে, কেহ ঘণ্টা নাড়িতেছে, কেহ বকাব কি করিতেছে, কেহ চন্দন ঘসিতেছে, কেহ পাক করিতেছে। দাসদাসীরা কেহ জলের ভার আনিতেছে, কেহ ঘর ধইতেছে, কেহ চাল ধাইয়া আনিতেছে, কেহ ব্ৰাহ্মণদিগের সঙেগ কলহ করিতেছে। অতিথিশালায় কোথাও ভস্মমাখা সন্ন্যাসী ঠাকুর জটা এলাইয়া, চিত হইয়া শইয়া আছেন। কোধাও উদ্ধববাহ এক হাত উচ্চ করিয়া, দত্তবাড়ীর দােসীমহলে ঔষধ বিতরণ করিতেছেন। কোথাও শেবতশমশ্রীবিশিষািট গৈরিকবসনধারী ব্রহ্মচারী রন্দ্রাক্ষমালা দোলাইয়া, নাগরী অক্ষরে হাতে লেখা ভগবদগীতা পাঠ করিতেছেন। কোথাও কোন উদরপরায়ণ “সাধ” ঘি ময়দার পরিমাণ লইয়া গন্ডগোল বাধাইতেছে। কোথাও বৈরাগীর দল শম্ভক কন্ঠে তুলসীর মালা আটিয়া, কপাল জড়িয়া তিলক করিয়া মদণ্ডগ বাজাইতেছে, মাথায় আকােফলা নড়িতেছে, এবং নাসিকা দোলাইয়া “কথা কইতে যে পেলেম না—দাদা বলাই সঙেগ ছিল—কথা কইতে যে” বলিয়া কীৰ্ত্তন করিতেছে। কোথাও বৈষ্ণবীরা বৈরাগিরঞ্জন রসিকলি কাটিয়া, খঞ্জননীর তালে। “মধো কানের” কি “গোবিন্দ অধিকারীরা” গীত গায়িতেছে। কোথাও কিশোরবয়সকো নবীনা বৈষ্ণবী প্রাচীনার সঙ্গে গায়িতেছে, কোথাও অন্ধ বয়সী বাড়া বৈরাগীর সঙ্গে গলা মিলাইতেছে। নাটমন্দিরের মাঝখানে পাড়ার নিম্পকৰ্ম্মমা ছেলেরা লড়াই, ঝগড়া, মারামারি করিতেছে এবং পরস্পর মাতাপিতার উদ্দেশে নানা প্রকার সদসভ্য গালাগালি করিতেছে। C এই তিন মহল সদর। এই তিন মহলের পশ্চাতে তিন মহল অন্দর। কাছারি বাড়ীর পশ্চাতে যে অন্দর মহল, তাহা নগেন্দ্রের নিজ ব্যবহায্য। তন্মধ্যে কেবল তিনি, তাঁহারা ভাৰ্য্যা ও তাঁহাদের নিজ পরিচয্যায় নিযক্ত দাসীরা থাকিত। এবং তাঁহাদের নিজ ব্যবহায্য দ্রব্যসামগ্রী থাকিত। এই মহল নতন, নগেন্দ্রের নিজের প্রস্তুত; এবং তাহার নিম্পমাণ অতি পরিপাটি। তাহার পাশে পাজার বাড়ীর পশ্চাতে সাবেক অন্দর। তাহ পরাতন, কুনিশ্চিমত; ঘর সকল অনাচ, ক্ষদ্র এবং অপরিস্কৃত। এই পরী বহসংখ্যক আত্মীয়কুটম্ব-কন্যা, মাসী, মাসীত ভগিনী, পিসী, পিসীত ভগিনী, বিধবা মাসী, সধবা ভাগিনেয়ী, পিসীত ভাইয়ের সত্ৰী, মাসীত ভাইয়ের মেয়ে, ইত্যাদি নানাবিধ কুটবিনীতে কাকসম্যাকুল বটব্যুক্ষের ন্যায়, রাত্ৰি দিবা কল কল RV id