পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রজনী সম্পভাবনা, তাহাকে দিত। রামসদয় নাক ডাকিলে, লবঙ্গ ছয়গাছা মল বাহির করিয়া, পরিয়া ঘরময় ঝমােঝমা করিয়া, রামসদায়ের নিদ্ৰা ভাঙিগয়া দিত। লবঙ্গলতা আমাদের ফলে কিনিত—চারি আনার ফলে লইয়া দই টাকা মাল্য দিত। তাহার কারণ, আমি কণা। মালা পাইলে, লবঙ্গ গালি দিত, বলিত, এমন কদৰ্য্য মালা আমাকে দিস কেন ? কিন্তু মাল্য দিবার সময় ডবল পয়সার সঙ্গে ভুল করিয়া টাকা দিত। ফিরাইয়া দিতে গেলে বলিত—ও আমার টাকা নয়—ব্দই বার বলিতে গেলে গালি দিয়া তাড়াইয়া দিত। তাহার দানের কথা মখে আনিলে মারিতে আসিত। বাসতবিক, রামসদয় বাবার ঘর না থাকিলে, আমাদিগের দিনপাত হইত না ; তবে যাহা রায় সয়, তাই ভাল বলিয়া, মাতা, লবঙেগর কাছে অধিক লাইতেন না। দিনপাত হইলেই আমরা সন্তুষ্ট থাকিতাম। লবঙ্গলতা আমাদিগের নিকট রাশি রাশি ফল কিনিয়া রামসদয়কে সাজাইত। সাজাইয়া বলিত—দেখ, রতিপতি। রামসদয় বলিত—দেখ, সাক্ষাৎ—অঞ্জনানন্দন। সেই প্রাচীনে নবীনে মনের মিল ছিল—দপণের মত দই জনে দাই জনের মন দেখিতে পাইত। তাহদের প্রেমের পদ্ধতিটা এইরনুপ রামসদয় বলিত, “ললিতলবঙগলতাপারিশী— ?” লবঙগ। অজ্ঞে ঠাকুরদাদামহাশয়, দাসী হাজির । রাম। আমি যদি মারি ? লব। “আমি তোমার বিষয় খাইব।” লবঙ্গ মনে মনে বলিত, “আমি বিষ খাইব ।” রামসদয় তাহা মনে মনে জানিত । লবঙ্গ এত টাকা দিত, তবে বড়বাড়ীতে ফল যোগান দঃখ কেন ? শান। একদিন মার জবর। অন্তঃপারে বাবা যাইতে পরিবেন না—তবে আমি বৈ আর কে লবঙ্গলতাকে ফল দিতে যাইবে ? আমি লবঙ্গের জন্য ফােল লইয়া চলিলাম। অন্ধ হই, যাই হই— কলিকাতার রাস্তা সকল আমার নখদপণে ছিল। বেত্ৰহস্তে সব্বত্র যাইতে পারিতাম, কখন গাড়ি ঘোড়ার সম্মখে পড়ি নাই। অনেক বার পদচারীর ঘাড়ে পড়িয়াছি বটে—তাহার কারণ, কেহ। কেহ অন্ধ যাবতী দেখিয়া সাড়া দেয় না, বরং বলে, “আ মালো! দেখতে পাসনে ? কাণা না কি ?” আমি ভাবিতাম, “উভয়তঃ ।” ফােল লইয়া গিয়া লবঙ্গের কাছে গেলাম। দেখিয়া লবঙ্গ বলিলেন, “কি লো কাণী—আবার ফােল লইয়া মরতে এয়েছিস কেন?” কাণী বলিলে আমার হাড় জিদলিয়া যাইত ন-আমি কি কদৰ্য্য উত্তর দিতে যাইতেছিলাম, এমত সময়ে সেখানে হঠাৎ কাহার পদধবনি শানিলাম—কে আসিল । যে আসিল—বলিল, “এ কে ছোট মা ?” ছোট মা! তবে রামসদায়ের পত্র। রামসদায়ের কোন পত্র! বড় পত্রের কন্ঠ একদিন শনিয়াছিলাম-সে। এমন অমািতময় নহে—এমন করিয়া কণ বিবর ভরিয়া, সািখ ঢালিয়া দেয় নাই। বঝিলাম, এ ছোট বাবা। ছোট মা বলিলেন, এবার বড় মদ, কণ্ঠে বলিলেন, “ও কাণা ফলওয়ালী।” “ফলওয়ালী! আমি বলি বা কোন ভদ্রলোকের মেয়ে।” লবঙ্গ বলিলেন, “কোন গা, ফািলওয়ালী হইলে কি ভদ্রলোকের মেয়ে হয় না ?” ছোট বাব, অপ্রতিভ হইলেন। বলিলেন, “হবে না কেন ? এটি ত ভদ্রলোকের মেয়ের মতই বোধ হইতেছে। তা ওটি কণা হইল কিসে ?” লবঙগ ৷৷ ও জনমান্ধ । ছোট বাব। দেখি ? ছোট বাবার বড় বিদ্যার গৌরব ছিল। তিনি অন্যান্য বিদ্যাও যেরপে যত্নের সহিত শিক্ষা করিয়াছিলেন, অর্থের প্রত্যাশী না হইয়া চিকিৎসাশাস্ত্রেও সেইরাপ যত্ন করিয়াছিলেন। লোকে রাস্ট্র করিত যে, শচীন্দ্র বাবা (ছোট বাব) কেবল দরিদ্রগণের বিনামল্যে চিকিৎসা করিবার জন্য চিকিৎসা শিখিতেছিলেন। “দেখি” বলিয়া আমাকে বলিলেন, “একবার দাঁড়াও তা গা!” আমি জড়সড় হইয়া দাঁড়াইলাম। ছোট বােব বলিলেন, “আমার দিকে চাও।” চাব কি ছাই! “আমার দিকে চোখ ফিরাও !” 8S )