পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী শ্ৰী। দাদা কি করিতেছেন ? চন্দ্র। পাপিঠেরা তার হাতে হাতকড়ি, পায়ে বেড়ি দিয়াছে। শ্ৰী। কাঁদিতেছেন কি ? চন্দ্র। না। নিঃশব্দ-নিস্তব্ধ। মাত্তি বড় গম্ভীর, বড় সন্দর। শ্ৰী। আমি একবার দেখিতে পাই না ? জন্মের শোধ দেখিব । চন্দ্র। দেখিবার সবিধা আছে। তুমি এই নীচের ডালে উঠিতে পাের ? শ্ৰী। আমি সত্ৰীলোক, গাছে উঠিতে জানি না। চন্দ্র। এ কি লজার সময় মা ? শিকড় হইতে হাত দাই উচুতে একটি সরল ডাল ছিল। সে ডালটি উচু হইয়া না উঠিয়া, সোজা হইয়া বাহির হইয়া গিয়াছিল। হাতখানিক গিয়া, ঐ ডাল দাই ভাগে বিভক্ত হইয়াছিল। সেই দাই ডালের উপর দাইটি পা দিয়া নিকটস্থ আর একটি ডাল ধরিয়া দাঁড়াইবার বড় সংবিধা। চন্দ্রচড়ি শ্ৰীকে ইহা দেখাইয়া দিলেন। শ্ৰী লজজা ত্যাগ করিয়া উঠিবার চেন্টা করিল—শমশানে লজা থাকে না । প্রথমে দই একবার চেন্টা করিয়া উঠিতে পারিল না-কাঁদিতে লাগিল। তার পর কি কৌশলে কে জানে, শ্ৰী ত জানে না, –সে সেই নিম্পন্ন শাখায় উঠিয়া, সেই জোড়া ডালে যািগল চরণ রাখিয়া, আর একটি ডাল ধরিয়া দাঁড়াইল । তাতে বড় গোলযোগ উপস্থিত হইল। যেখানে শ্ৰী দাঁড়াইয়াছিল, সেখানে সম্পমখদিকে পাতার আবরণ ছিল না-শ্ৰী সেই অসংখ্য জনতার সম্পমখবত্তিানী হইয়া দাঁড়াইল। সকলে দেখিল, সহসা অতুলনীয়া রপবতী বক্ষের ডাল ধরিয়া, শ্যামল পত্ররাশিমধ্যে বিরাজ করিতেছে। প্রতিমার ঠাটের মত, চারি দিকে বাক্ষশাখা, বক্ষপত্র ঘেরিয়া রহিয়াছে; চুলের উপর পাতা পড়িয়াছে, স্থল বাহর উপর পাতা পড়িয়াছে, বক্ষঃস্থ কেশদাম কতক কতক মাত্র ঢাকিয়া পাতা পড়িয়াছে, একটি ডাল আসিয়া পা দহখানি ঢাকিয়া ফেলিয়াছে; কেহ দেখিতে পাইতেছে না, এ মাত্তিমতী বনদেবী কিসের উপর দাঁড়াইয়াছে। দেখিয়া নিকটস্থ জনতা বাত্যাতাড়িত সাগরবৎ, সহসা সংক্ষব্ধ হইয়া উঠিল। শ্ৰী তাহা কিছই জানিতে পারিল না। আপনার অবস্থান প্রতি তাহার কিছমাত্ৰ মনোযোগ ছিল না। অনিমেষলোচনে গঙ্গারামের পানে চাহিয়া দেখিতেছিল, দই চক্ষা দিয়া অবিরল জলধারা পড়িতেছিল। এমন সময়ে শাখান্তর হইতে চন্দ্রচড়ি ডাকিয়া বলিলেন, “এ দিকে দেখা ! এ দিকে দেখ! ঘোড়ার উপর কে আসিতেছে ?” শ্ৰী দিগন্তরে দন্টিপাত করিয়া দেখিল, ঘোড়ার উপর কে আসিতেছে। যোদ্ধবেশ, অথচ নিরস্ত্র। আশাবী বড় তেজস্বিনী, কিন্তু লোকের ভিড় ঠেলিয়া আগাইতে পারিতেছে না। আশাবলী নাচিতেছে, দলিতেছে, গ্রীবা বাঁকাইতেছে, কিন্তু তব বড় আগ হইতে পারিতেছে না। শ্ৰী চিনিলেন, আশবপক্ঠে সীতারাম। এ দিকে গঙ্গারামকে সিপাহীরা কবরে ফেলিতেছিল। সেই সময়ে দই হাত তুলিয়া সীতারাম নিষেধ করিলেন। সিপাহীরা নিরস্ত হইল। শাহ সাহেব বলিলেন, “কিয়া দেখতে হো ! কাফেরকো মাটি দেও।” কাজি সাহেব ভাবিলেন। কাজি সাহেবের সে সময়ে সেখানে আসিবার কোন প্রয়োজন ছিল না, কেবল জনতা শনিয়া শখ করিয়া আসিয়াছিলেন। যখন আসিয়াছিলেন, তখন তিনিই কত্তা। তিনি বলিলেন, “সীতারাম যখন বারণ করিতেছে, তখন কিছ কারণ আছে। সীতারাম আসা পয্যন্ত বিলম্ব কর।” শাহ সাহেব অসন্তুষ্ট হইলেন, কিন্তু, অগত্যা সীতারাম পৌছান পৰ্যন্ত অপেক্ষা করিতে হইল। গঙ্গারামের মনে একটা আশার সঞ্চার হইল। সীতারাম কাজি সাহেবের নিকট পৌছিলেন। আশব হইতে অবতরণপাকবািক প্ৰণতমস্তকে শাহ সাহেবকে বিনয়পািব্বক অভিবাদন করিলেন। তৎপরে কাজি সাহেবকে তদ্রপ করিলেন। কাজি সাহেব জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন রায় সাহেব! আপনার মেজাজ সরীফ।” ਸੰਗ অলহম-দল-ইল্লা। মেজাজে মবারকের সংবাদ পাইলেই এ ক্ষদ্র প্রাণী হয় । bታ Ci bታ