পাতা:বঙ্গদর্শন-প্রথম খণ্ড.djvu/৬১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬১৪ কালে দাড়িওয়ালা ভোজপুরে পান্ধির সঙ্গে আসিয়াছিল । আমার পিত। হরমোহন দত্ত বুনিয়াদি বড় মানুষ । হাসিয়া বলিলেন, “ম, ইন্দিরে । আর তোমাকে রাখিতে পারি না। এখন যাও, আবার শীঘ্ৰ হোমাকে লইয়া আসিব । দেখ, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ দেখিয়া হাসিও না ।” তাই আমি শ্বশুর বাড়ী যাইতেছিলাম। আমার শ্বশুর বাড়ী মনোহরপুর। আমার পিত্রালয় মহেশপুর ; উভয় গ্রামের মধ্যে দশ ক্রোশ পথ । সুতরাং প্রাতে আহার করিয়া যাত্রা করিয়াছিলাম পৌঁছিতে পাঁচ সাত দণ্ড রাত্রি হইবে জানিতাম । পথে কালাদীঘি নামে এক বৃহৎ দীর্ঘিকা আছে । তাহার জল প্রায় অৰ্দ্ধক্রোশ। পাহাড় পর্বতের ন্যায় উচ্চ । তাহার ভিতর দিয়া পথ । চারি পাশ্বে বট গাছ । তাহার ছায়া শীতল, জল নীল মেঘের মত, দৃশ্য অতি মনোহর। তথায় মমুষ্যের সমাগম বিরল । ঘাটের নিকটে যে গ্রাম আছে, তাহারও নাম কালদিঘি । ” এই দীঘিতে এক লোক জন আসিঙ্গে ভয় করিত । দহু্যতাঁর ভয়ে এখানে দলবন্ধ ন হইয় লোক আসিত না । এই জন্য লোকে “ডাকাতে কালদিঘি” বলিত। দোকানদারকে লোকে দম্বদিগের সহায় উপরে এক খানি দোকান আছে মাত্র । , ইন্দির । বলিত। আমার সে সকল ভয় ছিল ন। | আমার সঙ্গে অনেক লোক—ষোল জন | বাহক, চারি জন দ্বারবান, এবং অন্যাস্থ্য লোক ছিল । যখন আমরা এই খানে পহুছিলাম, তখন বেলা আড়াই প্রহর । বাহকের বলিল, যে আমরা কিছু জল টল না খাইলে আর যাইতে পারি না । দ্বারবানের। বারণ করিল—বলিল এ স্থান ভাল নয় । বাহকের উত্তর করিল, আমরা এত লোক আছি—আমাদিগের ভয় কি ? আমার সঙ্গের লোক জন ততক্ষণ কেহই কিছুই খায় নাই। শেষে সকলেই বাহকদিগের মতে মত করিল । দীঘির ঘটে— বটতলায়—আমার পান্ধী নামাইল । আমি ক্ষণেক পরে অনুভবে বুঝিলাম, যে লোক জন তফাতে গিয়াছে । আমি তখন সাহস পাইয়া অল্প দ্বার খুলিয়া দীঘি দেখিতে লাগিলাম । দেখিলাম, বাহকের সকলে দোকানের সম্মুখে, এক বট বৃক্ষ তলে বসিয়া জলপান খাইতেছে । সে স্থান আমার নিকট হইতে প্রায় দেড় বিঘা। দেখিলাম যে সম্মুখে অতি নিবিড় মেঘের ন্যায়, বিশাল দীঘিকা বিস্তৃত রহিয়াছে, চারিপাশ্বে পর্বতশ্রেণীবৎ উচ্চ, অথচ হুকোমল শ্যামল তৃণাবরণ শোভিত “পাহাড় ;”—-পাহাড় এবং জলের মধ্যে বিস্তৃত ভূমিতে দীর্ঘ, বৃক্ষশ্রেণী ; পাহাড়ে | অনেক গোবৎস চরিতেছে—জলের উপরে