পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৮৫ } কমলাকাত্তের পত্র २०© ঘ্যান করিতেছে ? হে ভৃঙ্গ ! হে দ্বিরেফ ! হে ষটপদ ! হে অলে! হে ভ্রমর । হে ভোমরা ! হে ভো ভো -—” ভ্রমর কুপ করিয়া আসিয়া সামনে বসিল । তখন গুণ গুণ করিয়া গলা তুরস্ত করিয়া বলিতে লাগিল—আমি অহিফেণ প্রসাদে সকলেরই কথা বুঝিতে পারি—আমি স্থিরচিত্তে শুনিতে লাগিলাম । ভৃঙ্গরাজ বলিতে লাগিলেন, “হে বিপ্ৰ ! আমার উপর এত চোট কেন ? আমি কি একাই ঘ্যান ঘেনে ! তোমার এ বঙ্গভূমে জন্মগ্রহণ করিয়া ঘ্যান ঘ্যান করিব না ত কি করিব ? বাঙ্গালি হইয়া কে ঘ্যান ঘ্যানানি ছাড়া ? কোন বাঙ্গালির ঘ্যান ঘানানি ছাড়া অন্য ব্যবসা আছে ? তোমাদের মধ্যে যিনি রাজা মহারাজা কি এমনি একটা কিছু মাথায় পাগড়ি ঙ হইলেন, তিনি গিয়া বেলভিডিয়রে ঘ্যান ঘ্যান আরম্ভ করিলেন । যিনি হইবেন ওম্মেদ রাখেন, তিনি গিয়া রাত্রিদিবা রাজদ্বারে ঘ্যান ঘ্যান করেন । যিনি কেবল একটি চাকরির উমেদওয়ার - তার ঘ্যান ঘানানির ত আব অস্ত নাই। বাঙ্গালি বাবু যিনিই দুই চাৰিটা ইংরেজি বোল শিখিয়াছেন তিনি অমনি উমেদাররূপে পরিণত হইয়া, দৰখাস্ত বা টিকিট হাতে দ্বারে দ্বারে ঘ্যান ঘ্যান—উঁাশমাছির মত খাবার সময়ে, শোবার সময়ে, বসবার সময়ে, দাড়াবার সময়ে, দিনে, রাত্রে, প্রাহ্নে, অপরাহ্নে, মধ্যাহ্নে, সায়াহ্নে—ঘ্যান ঘ্যান ঘ্যান ! যিনি উমেদওয়ারি ছাড়িয়া স্বাধীন হইয়া উকীল হইলেন, তিনি আবার সনদী ঘ্যান ঘ্যানে! সত্য মিথ্যার সাগরসঙ্গমে প্রাতঃস্নান করিয়া উঠিয়া, যেখানে দেখেন কাঠগড়ার ভিতর বিড়ে মাথায় সরকারি জুজু বসিয়া আছে—বড় জজ, ছোট জজ, সবজজ, ডিপুটি, মুন্সেফ—সেইখানে গিয়া সেই পেশাদার ঘ্যান্‌ ঘেনে, ঘ্যান ঘানানির মোহন খুলিয়া দেন। কেহ বা মনে করেন ঘ্যান ঘ্যানানির চোটে দেশোদ্ধার করিবেন— সভাতলে ছেলে বুড়া জমা করিয়া ঘ্যান ঘ্যান করিতে থাকেন। কোন দেশে বৃষ্টি হয় নাই--এসে বাপু ঘ্যান ঘ্যান করি ; বড় চাকরি নাই না—এসে বাপু ঘ্যান ঘ্যান করি—রাম শৰ্ম্মার মা মরিয়াছে—এসো বাপু স্মরণার্থ ঘ্যান ঘ্যান করি। কাহারও বা তাতেও মন উঠে না-ৰ্তারা কাগজ কলম লইয়া, হস্তায় হণ্ডায়, মাসে মাসে দিন দিন ঘ্যান ঘ্যান করেন। আর তুমি যে বাপু আমার ঘ্যান ঘ্যানানিতে এত রাগ করিতেচ তুমিও কি করিতে বসিয়াছ ? বঙ্গশন সম্পাদকের কাছে কিছু আফিঙ্গের যোগাড় করিবে বলিয়া ঘ্যান ঘ্যান করিতে বসিয়াছ। আমার চে বোই কি এত কটু ? তোমায় সত্য বলিতেছি কমলাকান্ত ! তোমাদের জাতির ঘ্যান ঘ্যানানি আর ভাল লাগে না। দেখ আমি যে ক্ষুদ্র পতঙ্গ আমিও শুধু ঘ্যান ঘ্যান করি