পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

BRbre ] সমাজ সংস্কার ריצפא শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে এরূপ অনেক লোক আছেন যাহারা বলেন যে, “যে সকল চিরপ্রচলিত সামাজিক প্রথার অনিষ্টকারিতার বিষয় বুঝিয়াছ, তাহার বিরুদ্ধে পুস্তক লেখ, বক্তৃতা কর, তাহাতে আপত্তি নাই ; কিয়ৎপরিমাণে তদনুযায়ী কাৰ্য্য কর তাহাতেও আপত্তি নাই ; কিন্তু সম্পূর্ণরূপে করিও না। যতদূর করিলে সমাজের লোক সহ করিতে পারে, ততদূর কর ; তাহার অধিক আর যাইও না।” “সমাজের লোক সহ করিতে পারে" অর্থাৎ সমাজচ্যুত করিয়া না দেয় । যাহারা এ প্রকার বলেন তাহাদের যুক্তি আছে। যুক্তি এই যে, “তুমি যদি কোন উন্নত সত্য হৃদয়ঙ্গম করিয়া তদনুসারে কার্য্য করিতে থাক, কিন্তু যদি দেশের সাধারণ লোকের মনে চিরপ্রচলিত তদ্বিরোধী ভ্ৰমাত্মক সংস্কার বদ্ধমূল হইয়া থাকে তবে তাহারা তোমার আচরণ কখনই সহ্য করিতে পারিবে না । তাহারা তোমাকে সমাজ হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দিবে ; তোমার সহিত আহারাদি বা আদান প্রদান করিবে না । সমাজ হইতে বহিস্কৃত হইলে সমাজের ভিতর আর তোমার কোন ক্ষমতা চলিবে না, সুতরাং তোমার দ্বারা সমাজের কোন উপকারের সস্তাবনা থাকিবে না।" 競 সমাজের বাহিরে থাকিলে সমাজের ভিতরে কোন প্রভাব থাকে না, সমাঞ্জের কোন প্রকার উন্নতিসাধন করা যায় না, আমরা এ কথা স্বীকার করি না । যাহারা এমন কথা বলেন, তাহারা প্রতাক্ষের বিরুদ্ধ কথা বলেন। এখন হিন্দুসমাজে যে আশ্চর্য পরিবর্তন সংঘটিত হইতেছে তাহার মূল সমাজের ভিতরের লোক, না বাহিরের লোক ? চক্ষুকৰ্ণবিশিষ্ট ব্যক্তি মাত্রকেই স্বীকার কবিতে হইবে যে, এ পরিবর্তনের মূল কারণ ইউরোপীয়গণ। ইংলণ্ডের অধিকারে আসাতেই আমাদের দেশে এ পরিবর্তন উপস্থিত হইয়াছে। সমাজের ভিতরের লোক পরিবর্তনের কারণ নয়, সমাজের বাহিরের লোকই উহার মূল কারণ। এদেশে ইংরেজ অধিকার না হইলে এ পরিবর্তনস্রোত কে প্রবাহিত করিত ? লোকে যত ইউরোপীয়দিগের সংস্পর্শে আসিতেছে, যত পাশ্চাত্য জ্ঞান চতুর্দিকে বিস্তৃত হুইতেছে, সেই পরিমাণে হিন্দুসমাজের ভিত্তি মূল পৰ্য্যস্ত বিকম্পিত হইয়া উঠিতেছে। প্রস্তাব লেখকের জনৈক বন্ধু যথার্থই বলিলেন যে, আজকাল যে “আৰ্য্য* “আৰ্য্যবংশ" “আৰ্য্যগৌরব" বলিয়া চীৎকার উঠিয়াছে, হিন্দুসমাজভূক্ত কোন ব্যক্তি ইহার হেতু নহে। স্বপ্রসিদ্ধ জর্মান পণ্ডিত মোক্ষমূলর ইহার প্রধান কারণ। তবে কেমন করিয়া বলিব যে, সমাজের বাহিরে থাকিলে সমাজের ভিত্তর ক্ষমতা চলে না ? অতীত সাক্ষী ইতিহাস কি বলে একবার দেখা যাউক । প্রাচীন গ্রীস ও রোমবাসিগণ আমাদিগের স্কায় পৌত্তলিক ধৰ্ম্মাবলম্বী ছিলেন । ৯৫৫