পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৪৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*९ve ] মঙ্গর পর্বত ৪২৭ সরিয়া গিয়াছেন। অতএব অনার্য অমুরেরা ঐ পৰ্ব্বতের দক্ষিণ ও পূর্ববধারে থাকাই সম্ভব। ইহাতে এক প্রকার অনুভব হয় যে, বর্ষার সময় আর্য্য পিতামহেরা অম্মদেশে পদার্পণ করিয়াছিলেন। বাঙ্গালায় আসিবার কিছু পূৰ্ব্বে যে মিথিলা মগধ দেশে আর্য্যেরা বাস করিয়াছিলেন, তাহার সংশয় নাই । কারণ মানবধৰ্ম্মশাস্ত্রে উক্ত উভয় স্থল আর্য্য, ও বাঙ্গালা অনার্য্য বলিয়া নিৰ্দ্ধারিত আছে। অতএব মগধ ও মিথিলা হইতে মন্দর পর্বত দক্ষিণ পূৰ্ব্ব দিকে অবস্থিত থাকায় এক প্রকার অনুভূত হইতেছে যে, যখন তাহারা মন্দর পর্বতের সন্নিধানে আসিয়াছিলেন, তখন বাসুকি দক্ষিণ কি পুৰ্ব্বশির ছিলেন ; অর্থাৎ বর্ষা ছিল । সমুদ্রমন্থনে যে অমৃত উঠিয়াছিল, রাহু চণ্ডাল তাহা চুরি করিয়া রাখাতে চন্দ্র তাহা প্রকাশ করেন, এবং বিষ্ণুচক্র দ্বারা রাহুকে দ্বিধা করিয়া রাহু ও কেতুর স্বষ্টি কবেন। এই গল্পটার মূলে আমাদিগের বিবেচনায় একটি ঐতিহাসিক তৰ নিহিত আছে। অনুমান হয়, ঐ সময় জ্যোতিশাস্ত্রের আলোচনা বিশেষরূপে হইয়াছিল, এবং গ্রহণাদিৰ গণনা আরম্ভ হয়। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে জ্যোতিষের সামান্য সামান্ত জ্ঞান প্রকাশ পায় । বৈদিক জ্যোতিষ্টোম যজ্ঞে উক্ত শাস্ত্রের আলোচনা যে পূৰ্ব্ব হইতে ছিল, তাহ বিলক্ষণ উপলব্ধি হয় ; কিন্তু গ্রহণের প্রকৃততত্ব বোধ হয় আর্যের বাঙ্গালায় আসিবার সময় প্রথমে জানিতে পারিয়াছিলেন । বঙ্গদর্শনেব পাঠকগণ মনে করিতে পারেন যে, বাঙ্গালায় আসিয়া আর্য্যেরা বৈদ্যকশাস্ত্র, বাণিজ্য, জ্যোতিষ তত্ত্ব সকলই উত্তম শিক্ষা করিয়াছিলেন, এ কথা বলায় কেবল গরিমা প্রকাশ মাত্র । কিন্তু যথার্থপক্ষে আর্য্যেরা বাঙ্গালায় আসিবার কালে সভ্যতা ও জ্ঞান উভয়ে উন্নতি লাভ করিবেন তাহার বিচিত্র কি ? সপ্তসিন্ধুর তীর হইতে অনাৰ্য্য দস্থ্য, রাক্ষস প্রভৃতি বলবান অথচ অসভ্য এবং মূৰ্খ জাতিদিগকে ক্রমে ক্রমে পরাজিত ও নির্বাসিত করিতে বহুকাল গত হইয়াছিল, তৎকালমধ্যে বহুতর শাস্ত্রালোচনা ও স্ত্রীবৃদ্ধি সস্তুবে না। ফলতঃ যে সময় আৰ্য্যপ্রবরেরা বাঙ্গালায় পদার্পণ করেন, তাহার অব্যবহিত পরে চন্দ্রগ্রহণ প্রকাশিত হইয়া থাকিবে। প্রকৃত কাল নিরূপণের উপায় নাই, অথবা এক্ষণে আমাদিগের সন্ধানে নাই। আমাদিগের বিশ্বাস যে বেদ ও পুরাণে নৈসৰ্গিক ও ঐতিহাসিকতব রূপকাকারে অব্যক্ত আছে। বান্ধব পত্রিকার “সমাজবিপ্লব" নামক প্রবন্ধে লিখিত হইয়াছে যে, বিখ্যাত ইংরাজতত্ত্বজ্ঞ বেকনের স্যায় “প্রাচীনদিগের জ্ঞানে” অর্থাৎ প্রাচীন জাতিদিগের বিশেষত: ভারতীয় আৰ্য্যদিগের ঐ সকল রূপকাকারে পরিণত তত্ত্বসমূহ আবিক্রিয়া করিলে সাধারণের উপকার হয় এবং অন্ধকারাবৃত ভারতীয় পুরাবৃত্তের পক্ষে যথেষ্ট আলোক পাওয়া যায় । *