পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ડેરી, ] জটাধারীর রোজসামচা । 8ዊU পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ “খুলিল মনের দ্বার না লাগে কপাট” সামাজিক ঘটনাসূত্রের পাক-জাল খুলিতে কোন শাস্ত্রীই আজ পর্য্যন্ত সক্ষম নহেন ; বাহা জগতের বাণিজ্য ব্যবসায়ের দুই একটি সামান্য ঘটনার উদাহরণ দিয়াই ইদানীন্তন সমাজশাস্ত্রপ্রবর্তক মহাত্মারা সন্তুষ্ট হইয়াছেন, কিন্তু সামাজিক ঘটনার দীর্ঘ সূত্র আজ পর্য্যস্ত মানবপরিমিতির সাধ্যাতীত। কি হইতে কি হয় ! পাশক্রীড়া হইতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। নৃশংস মৃগয়াপরিশিষ্টে স্বৰ্গীয় নিৰ্ম্মল প্রণয়ের উৎপত্তি । মৃগয়ার শেষেই পুরুরবা উৰ্ব্বসী লাভ করেন —দুষ্মন্ত নিষ্কলঙ্ক শকুন্তলার প্রণয়পাশে বদ্ধ হন—আজ আবার শিকার খেলান্তে অমরেন্দ্রনাথ কাদম্বিনীর সরল কটাক্ষকলে চিরবদ্ধ হইলেন, তাহাতেই আবার শাস্তিপুরে শাস্তির ভিত্তি পত্তন হইল । 塔 বাঘ মারিয়া আমরা তর্কালঙ্কার মহাশয়ের আশ্রমাভিমুখে আসিয়া তাহার অটবী নিকট পৌছিলাম। স্থানটি বম্য। উত্তর পাশ্বে নদী ; অপর তিন দিকে বিস্তৃত হরিতময় শস্তক্ষেত্র। পূৰ্ব্বদিকে প্রথমতঃ একটি চতুষ্পাঠী, তাহার পশ্চিমে নারীগণের প্রাচীরবেষ্টিত আবাসস্থান ; • তাহার পশ্চিমে একটি বৃহৎ অটবী, আম্র, পনসের অনেকগুলি সুন্দর তরু ; একপাশ্বে কতকগুলি কদলি বৃক্ষ ও নিত্যপূজোপকরণ পুষ্পপ্রদায়ী জবা, করবী, বেল, চামেলি বেলা, যুই বৃক্ষ। উদ্যানের প্রান্তরে ঈশান কোণে একধারে নদীকূলে একটি বৃহচ্ছায়াশালী মালতিলতাবেষ্টিত পুরাতন বটবৃক্ষ। সেই বটবৃক্ষের প্রকাণ্ড শাখাতলে একটা বেদি, ফুল, ফল, সুগন্ধ চন্দন প্রভৃতি উপচারে মুশোভিত। বেদির কিঞ্চিৎ দূরে একটি বৃদ্ধ মালতিতলে, নীলাম্বরপরিধান মুক্তকেশী একটি পদ্মমুখী এক হস্তে পুষ্পপাত্র ও অন্য হস্তে একটি আকর্ষণী ধরিয়া মুগোল কাঞ্চন আভাময় বাহু উত্তোলন করিয়া পুস্পশাখা টানিতেছেন । এই ছবিটি সৰ্ব্বাগ্রে অমরেন্দ্র নাথের নয়নপথে পড়িল । তিনি কি ভাবিতেছিলেন বলিতে পারি না—আমার বোধ হইল, যেন হিমালয়ে জাহ্নবীতটে পতিপ্রাপ্তি কামনায় ভগবতী পুষ্পচয়ন করিতেন এই কুলকামিনীও সেইরূপ কোন নিগূঢ় কামনায় এখানে পূজার আয়োজন করিতেছেন। অমরেন্দ্রনাথ কহিলেন, “এই তর্কলঙ্কার মহাশয়ের পবিত্র গৃহ, এইখানেই আরাম করা যাউক ।” গৃহ হইতে তর্কালঙ্কার মহাশয় এই বাক্য শুনিয়াই কহিলেন, “আহো! ভাগ্য ! কে অমরেন্দ্ৰ নাথ বাবু! আমুন আমুন মুখঞ্জ একবারে পরিমান দেখিতেছি কেন?” এই কথা কহিতে কহিতে একটি