পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१२ve ] জটাধারীর রোজনামচা Գչ প্রতিদিন নিম্পত্তি করিতে হইত, আমি বালিকাগণের বিচারক ও রক্ষক ছিলাম ; রাঙ্গা ঠাকুরুণ আমাকে সেই জন্য পাড়ার মেজেষ্টর বলিয়া আদর করিতেন। এই জন্যই স্ত্রীগণের দোষ গুণ বিচারের জটাধারী অনেক দিন পর্য্যন্ত অধিকারী ও আপাতত: রাঙ্গা ঠাকুরাণীর চিত্র লিখনেও লেখনী-ধারী। রাঙ্গা ঠাকুরুণ বহুগুণসম্পন্না হইয়াও দাম্পত্যমুখে চির-বঞ্চিত। তিনি যে কবে বিধবা হইয়াছিলেন, তাহা আমার মনে নাই—জ্ঞানারম্ভ হইতে র্তাহাকে শুভ্ৰ, পবিত্র, বেশহীনা বিধবাই দেখিতাম । যে বৃহৎ পরগণার উপসত্ত্বে আশুতোষ বাবু এতদ্রুপ সমৃদ্ধিশালী, তাহার অনেক অংশ রাঙ্গা ঠাকরুণের স্ত্রীধন । কিন্তু ভাশুবের হস্তে সমস্ত বিষয়ই গচ্ছিত করিয়া তিনি কেবল ধৰ্ম্ম কৰ্ম্মে ব্যাপৃত থাকিতেন, দবিদ্রের দুঃখমোচনই তাহাব প্রধান কাৰ্য্য ছিল । তিনি যখন শুভ্ৰ পট্ট বস্ত্র পরিধানে আলু থালু কাল কেশরাশি কপালের উপরভাগে এল বন্ধনে, রাঙ্গ হস্তে দরবী ভলিয়া গুহ প্রাঙ্গণে শত শত বালক বালিকাকে স্বহস্তে অল্প বিতরণ করিতেন, সকলে কাণাকাণি কবিত যেন সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণ অবতীর্ণ হইয়াছেন । বিবাহ, শ্রাদ্ধ ক্রিয়াকলাপে সমস্ত গৃহস্থ কাৰ্য্য নিৰ্ব্বাহকাৰিণী—রাঙ্গা ঠাকুরাণীই প্রধান ভাণ্ডারিণী ছিলেন ; তিনি নিজ হস্তে যাহাকে যাহা দিতেন তাতাই তৃপ্তিকব—তাহাব দ্বিগুণ অপবেব হস্ত হইতে প্রাপ্ত হইলেও কেহ মুখী হইত না, এজন্য জটাধাবা বাঙ্গ করিয়া কহিভেন, “রাঙ্গা দিদির বড় হাত-যশ" হাড়ি ষ্টাড়ি মণ্ড হউক, থাল থাল মেওয হউক, বড়দিঘীর বড় রুক্তি হউক, বা উদ্যানেৰ সামান্য সামন্য ফল হউক,—আম হউক বা কুল হউক—রাঙ্গা ঠাকুরুণ বাটিয়া না দিলে কাহাবও মঞ্জুব নাই। আজ অন্নমেরু, কাল তুলা, পবশ্ব সাৰিত্ৰী ব্রতদানের আনন্দেই রাঙ্গা দিদির রাঙ্গ তবু নিয়ত মান মুখভঙ্গিটি কখন কখন প্রফুল্লতায় উজ্জল হইত। স্বয়ং নিঃসন্তান কিন্তু দেশের ছেলে র্তাহার সস্তান ছিল বলিলে অতুক্তি হয় না ; তখন জুত মোজার চালও ছিল না, সাধও ছিল না, কিন্তু কাহার ছেলে রাঙ্গা ঠাকুবাণীর প্রদত্ত রাঙ্গা ধুতি চাদরে সজ্জিত না হইত ? তাহার কল্যাণে গুরুমহাশয়েব শিধার অভাব ছিল না, ছাত্রদের পুস্তক কিনিবার বা পুস্তক ছিড়িবার কষ্ট ছিল না ; বিশেষতঃ ক্রিয়াকাণ্ডের ভোজের দিনে কমলমুখীর কোমলাঙ্গ যেন ধৰ্ম্মবলে দৃঢ় হইড, সূর্যোদয় ন হইতেই প্রাতঃস্নান করিয়া বেলা তৃতীয় প্রহর পর্য্যন্ত অনাহারে দেখ রাঙ্গণ দিদি শশব্যস্ত—আমি আবার বাঙ্গ করিয়া কহিতাম “বেশ রাঙ্গণ দিদি, আজ নাটাই হইয়া ঘুরিতেছ”—র্তাহার কেবল হাসিতে অবসর থাকিত, কখন কেবলমাত্র কহিতেন, “ক্ষীরের ছাচ কেমন হয়েছে দেখে যাও”—জটাধারী চাকিতে তৎপর। প্রকৃতাৰ্থ রাঙ্গা ঠাকুরুশ অতি প্রসিদ্ধ পাচিক ছিলেন, নিমন্বিত