পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় চতুর্থ খণ্ড.djvu/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>>8 মিলন হওয়া হইতে আরম্ভ করিয়া আর এই গাজিপুরে আসা পর্য্যস্ত সমস্ত স্মৃতি কমলা মনে মনে আবৃত্তি করিয়া লইল - যাহা অস্পষ্ট ছিল, সমস্ত স্পষ্ট হইল । রমেশ যখন বরাবর তাহাকে পরের স্ত্রী বলিয়া জানিতেছে এবং ভাবিয়া অস্থিয় হইতেছে যে, তাহাকে লইয়া কি করিবে, তথন যে কমলা নিশ্চিস্তমনে তাহাকে স্বামী জানিয়া অসঙ্কোrচ তাহার সঙ্গে চিরস্থায়ঃ ঘরকন্নার সম্পর্ক পাতাইতে বসিতেছে, ইহার লজ্জ কমলাকে বারবার করিয়া তপ্তশেলে বিধিতে থাকিল । প্রতিদিনের বিচিত্র ঘটনা মনে পড়িয়া সে যেন মাটির সঙ্গে মিশিয়া যাইতে লাগিল ! এ লজ্জ। তাহার জীবনে একেবারে মাথা হইয়া গেছে—ইহা হইতে কিছুতেই আর তাহার উদ্ধার নাই ! এখন কমলা কি করিবে ? আজ ত শৈল তাহার প্রাণের বন্ধু, আজ ত খুড়ার গৃহে তাহার পরম সমাদর, আজ ত তাহার জন্ত বাংলাঘর তাড়া লইয়া গৃহসজ্জা প্রস্তুত হইতেছে, কিন্তু এ সমস্তই যে একটিমঃ এ লজ্জাকর মিথ্যার উপরে প্রতিষ্ঠিত—সেই মিথ্যাটুকু সরিয়া গেলেই মুহূৰ্ত্তপরেই সমস্ত জগৎসংসারে কমলার একেবারেই আর বন্ধু নাই, আদর নাই, আশ্রয় নাই! কমল কি করিবে ! রুদ্ধঘরের দরজা খুলিয়া-ফেৰ্ণিয় কমল খিড়কির বাগানে বাহির হইয়া, পড়িল । অন্ধকার শীতের রাত্রি-কালো আকাশ কালে। পাথরের মত কন্‌কনে ঠাও । কোথাও বুষ্পের লেশ নাই ; তারাগুলি মুস্পষ্ট জ্বলিতেছে । बशीघ्रं★नि । { ৪র্থ বর্ষ, আষাঢ় প্রকাও বিশ্বের এই অবিচলিত স্তব্ধতা কমলাকে পীড়া দিতে লাগিল । সমস্ত এত বৃহৎ, এত বিপুল, অথচ ইহার মাঝখানে কোথাও কমলার জন্য একটিমাত্র উপায়, একটুমাত্র চিস্তা নাই। যাহা হইয়াছে, তাছার একটুও নড় চড়, হইবার জো নাই। সমস্ত নিরতিশয় লজ্জা, সমস্ত নিরুপায় দুঃখ লইয়। একলা কমলা কাহার দিকে তাকাইবে । একটা কথা কেহ বলুক্‌, একটিমাত্র ইঙ্গিত কেহ করুকৃ—এই বিশ্বব্যাপী অক্ষা নীরবতার মধ্যে কমলার মত অনভিজ্ঞ বালিকার উপরে একি নিদারুণ অসাধ সমস্যার মীমাংসাভার পডিয়াছে : সম্মুখে থৰ্ব্বাকার কলমের আমের বন অন্ধকার ব্লাড়াইয়া দাড়াইয়৷ রহিল । কমল৷ কোনমতেই কিছুই ভাবিয়া পাইল না । সে ঠাও। ঘাসের উপর বসিয়া পড়িল, কাঠের মূৰ্ত্তির মত স্থির হইয়া রহিল তাহার চোখ দিয়া একফোটা জল বাহির হইল না । এমন কতক্ষণ সে বসিয়া থাকিত বলা যায় না –কিন্তু তীব্র শাত তাহার হৃৎপিণ্ডকে দোলাইয়া দিল—তাহার সমস্ত শরীর ঠকৃঠকৃ করিয়৷ কঁাপিতে লাগিল। গভীর রাঞ্জে কৃষ্ণপক্ষের চক্রোদয় যখন নিস্তব্ধ তালবনের অন্তরালে অন্ধকারের একটি প্রাস্তকে ছিন্ন করিয়া দিল, তখন কমলা ধীরে ধীরে উঠিয়া ঘরে গিয়া দ্বার রুদ্ধ করিল। , সকালবেল কমলা চোখ মেলিয়া দেখিল, শৈল তাহার থাটের পাশে দাড়াই। আছে। অনেক বেলা হইরা গেছে বুঝির লজ্জিত কমলা তাঁড়াতাড়ি বিছানার উপর উঠিয়া বসিল । kr