পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় চতুর্থ খণ্ড.djvu/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা । ] . পরের কাছ হইতে হৃদ্যতাবিহীন দান লইবার একটা মস্ত লাঞ্ছনা এই যে, গৰ্ব্বিত দাতা খুব বড় করিয়া খরচের হিসাব রাখে, তাহার পরে কুইবেলা খোটা দেয়—‘এত দিলাম তত দিলাম, কিন্তু ফলে কি হইল ?’ মা স্তন্তদান করেন, খাতায় তাহার কোনো হিসাব রাখেন না, ছেলেও বেশ পুষ্ট হয়—স্নেহবিীনা ধাত্রী বাজার হইতে থাবার কিনিয়া রোরুদ্যমাণ মুখের মধ্যে গুজিয়া দেয়, তাহার পরে অহরহ খিটখিট করিতে থাকে— এত গেলাইতেছি, কিন্তু ছেলেটা দিনদিন কেবল কাঠি হইয়া যাইতেছে ? আমাদের ইংরাজ কর্তৃপক্ষের সেই বুলি ধরিয়াছেন। পেড়লার সেদিন বলিয়াছেন, আমরা বিজ্ঞানচর্চার এত বন্দোবস্ত করয়া দিলাম, এত আমুকুলা করিলাম, বৃত্তির টাকার এই অপব্যয় করিতেছি, কিন্তু ছাত্রের স্বাধীনবুদ্ধির কোনো পরিচয় দিতেছে না ! - অনুগ্রহজীবাদিগকে এই সব কথাই শুনিতে হয় —অথচ আমাদের বলিবার মুখ নাই ; বন্দোবস্ত সমস্ত তোমাদেরই হাতে, এবং সে বন্দোবস্তে যদি যথেষ্ট ফললাভ না হয়, তাহার সমস্ত পাপ আমাদেরই । এদিকে খাতায় টাকার অঙ্কটাও গ্রেটুপ্রাইমার অক্ষরে দেখান হইতেছে—যেন এত বিপুল টাকা এত-বড় প্রকাও অযোগ্যদের জন্ত জগতে আর কোনো দাতাকৰ্ণ ব্যয় करत्र ন—-অতRętą“moralo এই—হে অক্ষম, হে هاکی অকৰ্ম্মণ্য, তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তোমরা রাজভক্ত হও, তোমরা ভিক্টোরির মেমোরিয়ালে চাদ দিতে কপোলযুগু পুখুবর্ণ করিয়ে না ! ইহাতে ৰিষ্ঠালাভ কতটুকু হয় জানি না, • সাময়িক প্রসঙ্গ । 38న কিন্তু আত্মসম্মান থাকে না । আত্মসন্মান ব্যতীত কোন জাত কোনো সফলতা লাভ করিতে পারে না—পরের ঘরে জল-তোলা এবং কাঠ-কাটার কাজে লাগিতে পারে, কিন্তু দ্বিজধৰ্ম্ম অর্থাৎ ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্বের বৃত্তিরক্ষা করিতে পারে না । একটা কথা আমাদিগকে পৰ্ব্বদাই মনে রাখিতে হইবে যে, আমাদিগকে যে খোটা দেওয়া হইয়া থাকে, তাহ সম্পূর্ণ অমূলক । এবং র্যাহার খোটা দেন, র্তাহারাও যে মনে মনে তাহা জানেন না, তাহাও আমরা স্বীকার করিব না। কারণ, আমরা দেখিয়াছি, পাছে র্তাহীদের কথা অপ্রমাণ হইয়া যায়, এজন্ত র্তাহারা ভ্ৰস্ত আছেন। এ কথা আমাদিগকে মনে রাখিতে হইবে, বিলাতী সভ্যতা বস্তুত দুরূহ ও দুর্লভ নয়। স্বাধীন জাপান আজ পঞ্চাশবৎসরে এই সভ্যতা আদায় করিয়া লইয়া গুরুমার বিদ্যায় প্রবৃত্ত হইয়াছে। এ সভ্যতা অনেকটা ইস্কুলের জিনিষ, পরীক্ষা করা, মুখস্থ করা, চর্চা করার উপরেই ইহার নির্ভর । জাপানের মত সম্পূর্ণ সুযোগ ও আমুকুল্য পাইলে এই ইস্কুলপাঠ আমরা পেড়লার-সম্প্রদায় আসিবার বহুকাল পূৰ্ব্বেই শেষ করিতে পারিতাম। প্রাচ্য সভ্যতা ধৰ্ম্মগত—তাহার পথ নিশিত ক্ষুরধারের ন্তায় দুর্গম—তাহ ইস্কুলের পড়া নহে, তাহ জীবনের সাধন। একথু আমাদিগকে মনে রাখিতে হইবে, এতকাল অনেক বিদেশী অধ্যাপক আমাদের কালেজের পরীক্ষাশালায় যন্ত্রতন্ত্র লইয়া অনেক নাড়াচাড়া করিয়াছেন, তাহার কেহই স্বাধীনবুদ্ধি দেখাইয়া যশস্বী হইতে পারেন নাই।