পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় চতুর্থ খণ্ড.djvu/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

. চতুর্থ সংখ্যা । ] যোগেঞ্জ কহিল, “তোমার কানে কঠোর শুনাইবে আমি জানি, কিন্তু সকল দিকের মঙ্গল যদি চাও, তোমাকে কালবিলম্ব না করিয়া বিবাহ করিতে হইবে।” হেমনলিনী স্তন্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। যোগেন্দ্র অধৈর্য্য সংবরণ করিতে না পারিয়া বলিয়া উঠিল, “হেম, তোমরা কল্পনাদ্বারা ছোট কথাকে বড় করিয়া তুলিতে ভালবাস । তোমার বিবাহসম্বন্ধে যেমন গোলমাল ঘটিয়াছে, এমন কত মেয়ের ঘটিয়া থাকে —আবার চুকিয়া-বুকিয়া পরিষ্কার হইয়া যায় —নহিলে, ঘরের মধ্যে কথায় কথ,য় নভেল তৈরি হইতে থাকিলে ত লোকের প্রাণ বাচে না । ‘চিরজীবন সন্ন্যাসিনী হইয়া ছাদে বসিয়া আকাশের দিকে তাকাইয়া থাকিব, সেই অপদার্থ মিথ্যাচারীটার স্মৃতি হৃদয়মন্দিরে স্থাপন করিয়া পুজা করিব”—পৃথিবীর লোকের সামূনে এই সমস্ত কাব্য করিতে তোমার লজ্জা করিবে না,—কিন্তু আমরা যে লজ্জায় মরিয়া যাই! ভদ্র গৃহস্থঘরে বিবাহ করিম এই সমস্ত লক্ষ্মীছাড়া কাব্য, যত শীঘ্র পার, চুকাইয়া ফেল ।” - লোকের চোখের সামূনে কাব্য হইয়া উঠবার লজ্জা যে কতখানি, তাহা হেমনলিনী বিলক্ষণ জানে, এইজন্য যোগেন্দ্রের বিদ্রুপবাক্য তাঁহাকে ছুরির মত বিধিল । সে কহিল, "দাদা, আমি কি বলিতেছি সন্ন্যাসিনী হইম্বা থাকিব, বিবাহ করিব না !” যোগেন্দ্ৰ কহিল, “তাহ। যদি না বলিতে চাও ত ৰিবাহ কর । অবশু, তুমি যদি বল, স্বৰ্গরাজ্যের ইজদেবকে না হইলে তোমার পছন্দ হইবে না, তাহ হইলে সেই সন্ন্যালিনী নৌকাডুবি। ১৮৩ ব্ৰতই গ্রহণ করিতে হয় । পৃথিবীতে মনের মত কটা জিনিষই বা মেলে—যাহা পাওয়া যায়, মনকে তাহারই মুক্ত করিয়া লইতে হয়। আমি ত বলি, ইহাতেই মামুস্থের যথার্থ মহত্ত্ব।” f হেমনলিনী মৰ্ম্মাহত হইয়া কহিল,“দাদা, তুমি আমাকে এমন করিয়া খোটা দিয়া কথা বলিতেছ কেন ? আমি কি তোমাকে পছন্দ লইয়া কোনো কথা বলিয়াছি ?” যোগেন্দ্র। বল নাই বটে, কিন্তু আমি দেখিয়াছি—আকারণে এবং অন্যায় কারণে .তোমার কোনো কোনে। হিতৈষী বন্ধুর উপরে তুমি স্পষ্ট বিদ্বেষপ্রকাশ করিতে কুষ্ঠিত হও না। কিন্তু এ কথা তোমাকে স্বীকার করিতেই হইবে, এ জীবনে যত লোকের সঙ্গে তোমার অtলাপ হইয়াছে, তাহীদের মধ্যে একজন লোককে দেখা গেছে, যে ব্যক্তি মুখে-দুঃখে মানে-অপমানে তোমার প্রতি হৃদয় স্থির রাখিয়াছে, তোমার সমস্ত দুর্ব্যবহার নতশিরে গ্রহণ করিয়াছে এবং যে তোমার জন্ত সমস্ত ত্যাগ করিতে পারে। এই কারণে আমি তাহাকে মনে মনে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি । তোমাকে মুখী করিবার জন্ত জীবন দিতে পারে, এমন স্বামী যদি চাও, তবে সে লোককে খুজিতে হইবে না। আর যদি কাৰ্য করিতে চাও, তবে— হেমনলিনী উঠিয় দাড়াইয়াকছিল, “এমন করিয়া তুমি আমাকে বলিয়ে না! বাবা আমাকে যেরূপ আদেশ করিবেন, যাহাকে বিবাহ করিতে বলিবেন, আমি পালন করিষ । যদি না করি, তখন তোমার কাব্যের কথা \S) , তুলিম্বো ” • *