পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় চতুর্থ খণ্ড.djvu/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২৪ বঙ্গদর্শন । গুপসঙ্গই তাহার সদসদ্যোনিতে জন্মগ্রহণের একমাত্র কারণ । এই সমস্ত তত্ত্ব সামান্তত কাপিলসাংখ্যের । অনুযায়ী। সাংখ্যমতে” প্রকৃতি ও পুরুষ উভয়ই নিত্য, অনাদি ও অপরিচ্ছিন্ন । প্রকৃতি জড়, পুরুষ চেতন ; প্রকৃতি সবিকার, পুরুষ কুটস্থ নিৰ্ব্বিকার ; প্রকৃতি গুণময়ী, পুরুষ নিগুণ ; প্রকৃতি ভোগ্য, পুরুষ ভোক্তা। প্রকৃতির গুণের দ্বারাই সমস্ত কৰ্ম্ম নিম্পন্ন হয়, জগতের স্বষ্টিস্থিতিলয়— সমস্তই প্রকৃতির কার্য্য ; পুরুষ আকৰ্ত্ত, উদাসীন, সাক্ষিস্বরূপ। প্রকৃতি হইতে সত্ত্বরজস্তমোগুণ উৎপন্ন, পুরুষ তজ্জনিতসুখদুঃখভোগী। এই গুণাহুবন্ধেই পুরুষ দেহে নিবদ্ধ থাকে। প্রকৃতি ও পুরুষ পরস্পর সংযুক্ত থাকে। সেইজন্ত প্রকৃতির গুণ পুরুষে এবং পুরুষের গুণ প্রকৃতিতে উপচরিত হয়। সেইজন্য বস্তুত অচেতন হইলেও প্রকৃতিকে সচেতন বলিয়া মনে হয়, এবং বস্তুত কৰ্ত্ত না হইলেও পুরুষকে কর্তা বলিয়া মনে হয়। প্রকৃতি অচেতন, সুতরাং অন্ধ ; পুরুষ অকৰ্ত্তা, অতএব খঞ্জ + চলৎশক্তিরহিত । প্রকৃতি ব্যতিরেকে পুরুষ খঞ্জ, পুরুষ ব্যতিরেকে প্রকৃতি অন্ধ—উভয়ে সংযুক্ত থাকিয়! একে অন্তের অভাব পূরণ করে, তাহাদের সংযোগের ফলেই স্বষ্টি । প্রকৃতির সৃষ্টি নিজের জন্ত নহে—পরের ਫੈ। পুরুষ দর্শক হইয়া উপস্থিত না থাকিলে প্রকৃতি কোন কাৰ্য্য করে না। স্বষ্টির উদ্দেশু— পুরুষের ভোগ ও মোক্ষসাধন । সার্ধশাস্ত্র নিরীশ্বরশান্ত্র। সাংখ্য প্রবচনস্থত্রে স্পষ্টত ঈশ্বরের প্রতিষেধ করা হইয়াছে। উহার প্রথম অধ্যায়ের ৯২ সূত্র হচ্চে—“ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ” অর্থাৎ ঈশ্বরের অস্তিত্ববিষয়ে প্রমাণাভাব । সেইজন্তু সেশ্বর পাতঞ্জলদর্শনের বিপরীতপক্ষে কাপিলদর্শনকে নিরীশ্বরসাংখ্য বলা হয় । সাংখ্যেরা বলেন, প্রকৃতির পরিণাম স্বতঃসিদ্ধ—প্রকৃতি পরিণত না হইয়া থাকিতে পারে না ; অখ কথায়, প্রকৃতি স্বতই জগৎস্যষ্টি করে, কোন স্বতন্ত্র চেতন কৰ্ত্তার অপেক্ষা রাখে না । জগতের স্বষ্টিকার্য্যে ঈশ্বরের কোন হস্ত নাই । গীতায় অপর পক্ষে ঈশ্বরবাদ সমুজ্জল । গীতোক্ত প্রকৃতি-পুরুষ-তত্ত্ব ঈশ্বল্পবাদপ্রভাবে অভিনব রূপ ধারণ করিয়াছে। সাংখ্যমতে প্রকৃতি ও পুরুষ বিশ্বের চরম দ্বৈত-এই মহা-দ্বৈতে সাংখ্যশাস্ত্রের পর্য্যবসান । “এই উভয়ের সমন্বয়ে যে চরম একত্বে উপনীত হওয়া যায়, সাংখ্যদর্শনে তাহার আভাস নাই। গীতা কিন্তু সে চরম একত্বের সুস্পষ্ট উপদেশ দিয়াছেন ।” গীতার মতে ঈশ্বরই জগতের মুলকারণ -“সৰ্ব্বভূতের সনাতন বীজ।” ' । এই পঞ্চভূতময় জড়জগৎ ও জীবভূত জগৎ, তাহার দুই অংশ—দুই প্রকৃতি —এক অপর প্রকৃতি, অন্ত পরা প্রকৃতি । ভগবান বুলিতেছেন— ভূমিরাপোহনলে৷ বায়ুঃ থং মনে বুদূিরব 5 | অহঙ্কার ইতীয়ং মে ভিন্ন প্রকৃতিরষ্টধা ॥ অপরেয়মিতত্ত্বস্তাং প্রকৃতিং বিন্ধি মে পরাম্। জীবভূতাং মহাবাহে যয়েদং ধার্যাতে জগৎ ॥ i. *ভূমি; জল, অগ্নি, বায়ু আকাশ, মন, *ৰুদ্ধি, অহঙ্কার, আমার ভিন্ন ভিন্ন অষ্টপ্রকার