পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় চতুর্থ খণ্ড.djvu/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ર૧૨ মার ঘণ্টা-দুই আগে একটা অস্পষ্ট জনশ্রুতি ছাড়া নলিনাক্ষসস্বন্ধে যোগেন্দ্র কিছুই জানিত না , হেম একটা আগ্রহ দেখাইয়া কহিল, “বেশ ত বাবা, চল না, তাহার বক্তৃত৷ শুনিতে যাইব ।” - হেমনলিনীর এইরূপ উৎসাহের ভাবiাকে অন্নদা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করিলেন ন— তথাপি তিনি মনে মনে একটু খুসি হইলেন। তিনি ভাবিলেন, হেম যদি জোর করিয়া ও এইরূপ মেলামেশা যাওয়া-আসা করিতে থাকে, তাহা হইলে শীঘ্র উহার মন সুস্থ হইবে । মানুষের সহবাসই মানুষের সৰ্ব্বপ্রকার মনোবৈকল্যের প্রধান ঔষধ । তিনি কহিলেন, “তা বেশ ত যোগেন্দ্র, কাল যথাসময়ে আমাদের মাটিঙে লইয়। যাইয়ো । কিন্তু নলিনাক্ষসম্বন্ধে কি জান, বল ত । অনেক লোকে ত অনেক কথা কয় ?” যে অনেক লোকে অনেক কথা বলিধু৷ থাকে, প্রথমত যোগেন্দ্র তাহাদিগকে খুব একচেটি গালি দিয়া লইল । বলিল, “ধৰ্ম্ম লষ্টয়া যাহারা ভড়ৎ করে, তাহারা মনে করে, কথায় কথায় পরের প্রতি অবিচার ও পর নিন্দা করিবার জন্ত তাহার। ভগবানের স্বাক্ষরিত দলিল লইয়। জন্মগ্রহণ করিয়াছে—ধৰ্ম্মব্যবসায়ীদের মত এতবড় সঙ্কীর্ণচিত্ত বিশ্বনিন্দুক আর জগতে নাই – বলিতে বলিতে যোগেন্দ্র অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া উঠিল । অল্পদ যোগেন্দ্রকে ঠাও করিবার জন্য বারবার বলিতে লাগিলেন—“সে কথা ঠিক, লে ক্ষ৭ ঠিক ! পরের দোষক্ৰটি ইয়া কেবলি , বঙ্গদর্শন । ৪র্থ বর্ষ, ভাদ্র । আলোচনা করিতে থাকিলে মন ছোট হইয়া যায়, স্বভাব সন্দিগ্ধ হইয়া উঠে, হৃদয়ের সরসতা থাকে না ।" যোগেন্দ্ৰ কহিল—“বাবা, তুমি কি আমাকে লক্ষ্য করিয়া বলিতেছ । কিন্তু ধাৰ্ম্মিকের মত আমার স্বভাব নয়—আমি মন্দ বলিতে ও জানি, ভাল বলিতেও জানি—এবং মুথের উপরে স্পষ্ট করিয়া বলিয়া হাতে-হাতেই সব কথা চুকাইয়া ফেলি।” অন্নদা বাস্ত হইয়। কহিলেন—“যোগেন, তুমি কি পাগল হইয়াছ ? তোমাকে লক্ষ্য করিয়া বলিব কেন ? আমি কি তোমাকে চিনি না ?” তখন छूब्रि छूब्रि প্রশংসাবাদের দ্বার। পরিপূর্ণ করিয়া যোগেন্দ্ৰ নলিনাক্ষের বৃত্তান্ত বিবরিত করিল । কহিল, “মাতাকে সুখী করিবার জন্তু নলিনাক্ষ আচারসম্বন্ধে সংযত হইয়া কাশীতে বাস করিতেছে, এইজন্যই, বাব, তুমি যাহাদিগকে অনেক লোক বল, তাহারা অনেক কথা বলিতেছে । কিন্তু আমি ত এজন্য নলিনাক্ষকে ভালই বলি । হেম, তুমি কি বল!” হেমনলিনী কহিল—“আমিও ত তাই বলি।” যোগেন্দ্র কহিল—“হেম যে ভালই বলিবে, তাহা অামি নিশ্চয় জানিতাম । বাবাকে সুখী করিবার জন্য চেম একটা-কিছু ত্যাগস্বীকার করিবার উপলক্ষ্য পাইলে যেন sে তাহা আমি বেশ বুঝিতে পারি ” অন্নদা মেহকোমলহাঙ্কে ছেমের মুখের দিকে চাহিলেন—হেমনলিনী লজ্জায় রক্তিম মুখখানি নত করিল। ক্রমশ ।