পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় চতুর্থ খণ্ড.djvu/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ সংখ্যা নৌকাডুবি । శ్రీర్చి ইতুিপূৰ্ব্বে নলিনাক্ষের কথাৰাৰ্ত্তায় হেমনলিনী মনে মনে একটু যেন আঘাত পাইতেছিল। সে বুঝিতে পারিতেছিল, নলিনাক্ষ নিজেকে তাহাদের কাছে ঠিকভাবে প্রকাশ করিতেছিল না । সে কেবলি বেশি কথা কহিয়া নিজেকে ঢাকিয়া রাখিবারই চেষ্টা করিতেছিল। হেমনলিনী জানিত না, প্রথম পরিচয়ে নলিনাক্ষ একটা একান্ত সঙ্কোচের ভাব কিছুতেই তাড়াইতে পারে না। এইজন্ত নুতন লোকের কাছে অনেক স্থলেই সে নিজের স্বভাবের বিরুদ্ধে জোর করিয়া প্ৰগলভ হইয় উঠে। নিজের অকৃত্রিম মনের কথা বলিতে গেলেও তাহার মধ্যে একটা বেমুর লাগাইয়া বসে। সেটা নিজের কানেও ঠেকে । সেইজন্যই আজ যোগেন্দ্র যখন অধীর হইয়া উঠিয়া পড়িল, তখন নলিনাক্ষ মনের মধ্যে একটা ধিক্কার অমুভব করিয়া তাহার সঙ্গে পালাইবার চেষ্টা কুরিয়াছিল। কিন্তু নলিনাক্ষ যখন মার কথা বলিল, তখন হেমনলিনী শ্রদ্ধার চক্ষে তাহার মুখের দিকে-না চাহিয়া থাকিতে পারিল না, এবং "মাতার উল্লেখমাত্রে সেই মুহূর্তেই নলিনাক্ষের মুখে যে একটি সরস ভক্তির গাম্ভীর্য প্রকাশ পাইল, তাহ দেখিয়া হেমনলিনীর মন আর্দ্র হইয়া গেল । তাহার ইচ্ছা করিতে লাগিল, নলিনাক্ষের মাতার সম্বন্ধে তাহার সঙ্গে আলোচনা করে, কিন্তু সঙ্কোচে তাহ পারিল ন। অন্নদাবাবু ব্যস্ত হইয়। বলিয়া উঠিলেন, “লিক্ষণ! এ কথা পূৰ্ব্বে জানিলে আমি কখনই আখনাকে চ ঋইতে অনুরোধ কল্পিতাম না মাপ করিবেন!” c নলিনাক্ষ একটু হাসিয়া কলি, “চ লইতে পারিলাম না বলিয়া আপনাদের স্নেহের অন্তরোধ হইতে কেন বঞ্চিত হইৰ ?” নলিনাক্ষ চলিয়া গেলে হেমনলিনী তাহার পিতাকে লইয়া দোতলার ঘরে গিয়া বসিল এবং বাংলা মাসিকপত্রিক হইতে প্রবন্ধ বাছিয়া তাহাকে পড়িয়া গুনাষ্টতে লাগিল। শুনিতে শুনিতে অল্পদাবাবু অনতিবিলম্বে ঘুমাষ্টয়া পড়িলেন । কিছুদিন হইতে অন্নদাবাবুর শরীরে এইরূপ অবসাদের লক্ষণ নিয়মিতভাবে প্রকাশ পাইতেছে । অন্নদাবাবু ঘুমাইয়া পড়িতেই আজ হেমনলিনী নিঃশব পদে ঘর হইতে ৰাহির হইয়া ছাদের উপর উঠিল। হেমন্তের স্বৰ্য্য অস্ত গিয়াছে । আকাশে আজ বর্ণচ্ছটা নাই । কলিকাতার ধুলিমিশ্রিত ঘনধুম্ৰ বাম্পের ভিতর দিয়া অত্যন্ত মলিন তাম্রবর্ণ স্থধ্যাস্তেয় আভা অভিভূত হইতেছে । ছাদের প্রান্ত প্রাচীরে ভর দিয়া হেমনলিনী পাশের বাড়ীর দিকে চাহিয়া রছিল। আজ ঘরের জান্‌লাগুলি খোলা ; এতদিনের রুদ্ধঘরে বায়ুচালনার চেষ্টা করা হইতেছে। ঘরগুলি যেন এতকাল যে পুরাতনের বন্ধস্মৃতিকে বুকে চাপিয়া-ধরিয়া বাহিরের সছিত সমস্ত সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন করিয়াছিল, সেই স্মৃতিকে আজ অনন্ত আকাশ, ৰাতাস ও আলোকের মধ্যে বিদায় দিবার জন্ত বক্ষঃকপাট উন্মুক্ত করিয়াছে। হেমনলিনী সেই মুক্তৰাত্তান ঘরগুলির শূন্ততা ও অন্ধকারের মঙ্গে অঙ্গকরে এই সারস্তনকালের বাষ্পস্তরভেদী মানকরুণ রশ্মিরেখার স্তায়, তাহার ব্যাকুলবৃষ্টি প্রেরণ করিল। •