পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় চতুর্থ খণ্ড.djvu/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ు পরিচয় দিতে ‘বঙ্গদর্শনে’র খানিকটা স্থান নষ্ট করিতে হয় । কৰ্ত্তব্য বিবেচনা করিয়াই এই কষ্ট ও বিড়ম্বন আমরা স্বীকার করি ; ইচ্ছাধীন হইলে অনেক ধাঙ্গল উপন্যাসই দুইচারি পাতা পড়িয়া ফেলিয়া দিতাম । সেইজন্ত, কদাচিৎ এক আধখানি মুখপাঠ্য উপন্যাস যখন হাতে আসে, তখন আমাদের বড়ই আহলাদ হয়, এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দোষ উপেক্ষা করিয়৷ শতমুখে প্রশংসা করিতে ইচ্ছা করে। এই উপন্যাসখানি পড়িয়া মামরা বড়ই আনন্দিত হইয়াছি। গ্রন্থকার ষে মানবচরিত্রজ্ঞ এবং রসাবতারণায়মুনিপুণ, তাহার পরিচয় এই উপকৃাসের সর্বত্রই বিদ্যমান । যেখানে যে রসের অবতারণা করিতে চেষ্টা করিয়াছেন, সেখানে সেই রসই বেশ ফুটিয়া উঠিয়াছে। যেখানে হাস্তরসের চেষ্টা আছে, সেখানে না হাসিয়৷ থাকা যায় না ; যেখানে করুণরসের উদ্যম, সেখানে হৃদয় আদ্র হইয়। আইসে ; যেখানে মনুষ্যচরিত্রের পাশবিকতার অবতারণা, সেখানে তীব্র ঘৃণার উদ্রেক হয় । ইহাই ত সাহিত্যিক দক্ষতা । চরিত্রচিত্রণেও গ্রন্থকার বিশেষ নিপুণতার পরিচয় দিয়াছেন । বিরাজমোহিনী, তরঙ্গিণী, অদ্বৈত ঘোষ এবং তাহার পত্নী অনঙ্গমঞ্জরী, এই কয়টি চরিত্র বেশ ফুটিয়াছে--নিজ নিজ প্রকৃতি অনুসারেই ফুটিয়াছে । ইহার মধ্যে অনঙ্গমঞ্জরী বিশেষরূপে উল্লেখের ‘ যোগ্য । এই চরিত্রটি সম্পূর্ণ অভিনব, মৌলিক, অথচ रत्रम*न । [ ৪র্থ বর্ষ, বৈশাখ । স্বভাবাজুবন্ত্রী। এই চরিত্রের কল্পনা ও পরিণতির জন্ত দামোদরবাবুর বিশেষ প্রশংসা করিতে হয়। সনাতন মুখোপাধ্যায় এই উপাথ্যানের প্রাণস্বরূপ সকল অমুষ্ঠানের, সকল ঘটনার, সকল পরিণতির তিনিই, মূল ভূত-- অথচ তাহার চরিত্র এই উপন্যাসে সম্যক্ষ পরিস্ফুট হয় নাই। তাছাকে ভাল করিয়া বুঝিতে হইলে, কতকটা পুস্তকখানি পড়িয়া জানিতে হয়, কতকটা ভাবিয়া লইতে হয় ; তবে, ভাবিয়া লইতে পারা যায়, এরূপ উপকরণ পুস্তকেই আছে। সনাতন-চরিত্রের এই অপরিস্ফুটতা, গ্রন্থকারের নিন্দার কথা নহে ; বরং তাহার প্রশংসার কথা । কার্য্যত তিনি ত সংসারক্ষেত্রে প্রচ্ছন্নভাবেই বিচরণ করিয়াছেন ; সুতরাং তাহার চরিত্র কতকটা প্রচ্ছন্ন রাখিয়া গ্রন্থকার ভালই করিয়াছেন । আর, তিনিই উপন্যাসের প্রাণ বলিয়াই হয় ত পরিস্ফুট নহেন। প্রাণ.ত চিরকালই এবং সৰ্ব্বত্রই প্রচ্ছন্ন—অন্তরালে অবস্থিত । এই পুস্তকের ‘বিজ্ঞাপনে গ্রন্থকার {লখিয়াছেন—“সাধ্যমতে স্বার্থসিদ্ধির বাসনা বিসজ্জম দিয়া যথাসম্ভব পরহিতসাধন ব্রত গ্রহণ করিতে পারিলে, মানৰ স্বকীয় আত্মার এরং সমাজের প্রভূত উন্নতি সংসাধিত করিতে পারেন, এই তত্ত্ব কথা বৰ্ত্তমান সামান্ত গ্রন্থের প্রতিপাদ্য ।” আমরা অকুষ্ঠিতচিত্তে ধলিতে পারি সে, গ্রন্থকার ইহা দেখাইতে সমর্থ হইয়াছেন। উপন্যাসধানি'সৰ্ব্বতোভাবে সমাদৃত হইবার উপযুক্ত । শ্ৰীচন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায় ।