পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম সংখ্যা । ] নৌকাডুবি । SeS অন্নদণবাবু কথাটাকে গম্ভীরভাবে লইয়া বিস্তারিতরূপে প্রমাণ করিতে বসিলেন যে, ভাবুক হইলেও হজম করাট চাইই । রমেশ নীরবে বসিয়া মনে মনে দগ্ধ হইতে লাগিল । অক্ষয় কহিল, “রমেশবাবু, আমার পরামর্শ শুকুন—অন্নদাবাবুর পিল খাইয়া একটু সকালসকাল শুইতে যান!” রমেশ কহিল, “অন্নদাবাবুর সঙ্গে আজ আমার একটু বিশেষ কথা আছে, সেইজন্ত আমি অপেক্ষণ করিয়া অাছি।” অক্ষয় চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া কহিল— “এই দেখুন, এ কথা পূৰ্ব্বে বলিলেই হইত। রমেশবাবু সকল কথা পেটে রাখিয়া দেন, শেষকালে সময় যখন প্রায় উত্তীর্ণ হইয়া যায়, তখন ব্যস্ত হইয়া উঠেন ।* অক্ষয় চলিয়া গেলে রমেশ নিজের জুতাজোড়াটার প্রতি দুই নতচক্ষু বদ্ধ রাখিয়া বলিতে লাগিল—“অন্নদণবাবু, আপনি আমাকে আত্মীয়ের মত আপনার ঘরের মধ্যে যাতায়াত করিবার অধিকার দিয়াছেন, ইহা অামি যে কত সৌভাগ্যের বিষয় বলিয়া জ্ঞান করি, তাহা আপনাকে মুখে বলিয়া শেষ করিতে পারিব না ।” অন্নদীবাবু কহিলেন—“বিলক্ষণ ! তুমি আমাদের যোগেনের বন্ধু, তোমাকে ঘরের ছেলে বলিয়া মনে করিব না ত কি করিব ?” ভূমিকা ত হইল, তাহার পরে কি বলিতে হইবে, রমেশ কিছুতেই ভাবিয়া পায় না । রমেশের আরক্তবর্ণ মুখ দেখিয়া অন্নদবাৰু ব্যাপারখানা বুঝিতে পারিলেন। তিনি রমেশের পথ সুগম করিয়া দিবার জন্ত কহিলেন —*রমেশ, তোমার মত ছেলেকে ঘরের ছেলে করিতে পারা আমারই কি কম সৌভাগ্য ।” ইহার পরেও রমেশের কথা জোগাইল न1 ।। অন্নদীবাবু কহিলেন—“দেখ না, তোমাদের সম্বন্ধে বাহিরের লোক অনেক কথা বলিতে আরম্ভ করিয়াছে। তাহারা বলে, হেমনলিনীর বিবাহের বয়স হইয়াছে, এখন তাহার সঙ্গিনির্বাচনসম্বন্ধে বিশেষ সতর্ক হওয়া আবশ্বক। আমি তাহাদিগকে বলি, রমেশকে আমি খুব বিশ্বাস করি—সে আমাদের উপরে কখনই অদ্যায় ব্যবহার করিতে পারিবে না । এই সেদিন তারক আমাকে বলিতেছিল, ‘রমেশবাৰু তোমাদের সঙ্গে যেরূপ মেশ মেশি করিতে আরম্ভ করিয়াছেন, র্তাহার অভিপ্রায় স্পষ্ট করিয়া জানা উচিত— লোকে এ সম্বন্ধে আলোচনা করিতে আরম্ভ করিয়াছে ।* আমি কহিলাম, ‘রমেশ স্পষ্ট করিয়া কোন কথা বলুক বা না বলুক, তাহার দ্বারা হেমনলিনীর যে লেশমাত্র অনিষ্ট হইবে না, সে আমি নিশ্চয়ই জানি।” . রমেশ । অন্নদাবাৰু, আমার সম্বন্ধে আপনি সমস্তই ত জানেন, আপনি যদি আমাকে যোগ্যপাত্র বলিয়া মনে করেন, তবে— -> - অন্নদা। সে কথা বলাই বাহুল্য । আমরা ত একপ্রকার ঠিক করিয়াই রাখিস্বাছি—কেবল তোমার সাংসারিক দুর্ঘটনার ব্যাপারে দিন স্থির করিতে পারি নাই । কিন্তু বাপু, আর বিলম্ব করা উচিত হয় না । সমাজে এ লইয়া ক্রমেই নানা কথার স্বষ্টি হইতেছে—