পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

చిe 8 সেটা যত শীঘ্র হয়, বন্ধ করিয়া দেওয়া কর্তব্য । কি বল ? রমেশ । আপনি যেরূপ আদেশ করিবেন, তাঁহাই হইবে । অবশু সৰ্ব্বপ্রথমে আপনার কন্থার মত জানা অবিশ্রাক । অন্নদা । সে ত ঠিক কথা । কিন্তু সে একপ্রকার জানাই আছে। তবু কাল সকালেই সে কথাটা পাকা করিয়া লইব । রমেশ । আপনার শুইতে যাইবার বিলম্ব হইতেছে, আজ তবে আসি । $ অন্নদা । একটু দাড়াও । আমি বলি কি, আমরা জব্বলপুরে যাইবার আগেই তোমাদের বিবাহটী হইয়া গেলে ভাল হয় । রমেশ । সে ত আর বেশি দেরি নাই । অন্নদী । না, এখনো দিনদশেক আছে । অণগামী রবিবারে যদি তোমাদের বিবাহ হইয়া যায়, তাহ হইলে তাহার পরেও যাত্রার আয়োজনের জন্ত দুতিনদিন সময় পাওয়া যাইবে । বুঝিয়াছ রমেশ, এত তাড়া করিতাম না,—কিন্তু আমার শরীরের জন্তই ভাবনা । অণজকাল পিলটা খাইয়া কিছু ভাল আছি, কিন্তু বলা ত যায় না । আমি যদি পড়ি, তাহা হইলে বন্দোবস্ত সমস্তই গোল হইয়। যাইবে—কেবল এক অক্ষর ছাড়া অামাকে সাহায্য করিবার লোক আর কেহ নাই। রমেশ সম্মতৃ হইল এবং আর-একটা পিল গিলিয়া বাড়ী চলিয়া গেল । -- >8 বিবাহপরিণামটা এতদিন অন্যুট আকারে ছিল । অবশু হেমনলিনীকে বিবাহ করিতে তাহায় ধৰ্ম্মসঙ্গত কোন বাধা নাই, এ কথ। মনের মধ্যে নিশ্চয় করিয়াই রমেশ এমন यञ्जालभनि । [ ৩য় বর্ষ, ভায় । নিশ্চিন্তভাবে ভালবাসার টানে হাল ছাড়িয় দিয়াছিল। বিবাহের প্রস্তাবট যখনি স্পষ্ট হইল, তখনি নানা কৰ্ত্তব্যাকৰ্ত্তব্যের কথা তাহার মনে জাগিয়া উঠিল । আর একবার কমলাসম্বন্ধে ভাল করিয়া মনোযোগ করিবার সময় আসিল । কিন্তু সময় অত্যস্ত অল্প । বিদ্যালয়ের ছুটি নিকটবর্তী। ছুটির সময়ে কমলাকে বিদ্যালয়েই রাখিবার জন্ত রমেশ কীর সহিত পুৰ্ব্বেই ঠিক করিয়াছিল । রমেশ প্রত্যুষে উঠিয়া ময়দানের নির্জন রাস্তায় পদচারণা করিতে করিতে স্থির করিল, বিবাহের পর সে কমলাসম্বন্ধে হেমনলিনীকে সমস্ত ঘটনা আগাগোড়া বিস্তারিত করিয়া বলিবে । তাহার পরে কমলাকেও সমস্ত কথা বলিবার অবকাশ হইবে । এইরূপ সকল পক্ষে বোঝাপড়া হইয়া গেলে কমলা স্বচ্ছন্দে বন্ধুভাবে হেমনলিনীর সঙ্গেই বাস করিতে পারিবে । দেশে ইহা লইয়। নানা কথা উঠিতে পারে, ইহাই মনে করিয়া সে হাজারিবাগে গিয়া প্র্যাকৃটিস করিবে স্থির করিয়াছে । ময়দান হইতে ফিরিয়া আসিয়া রমেশ অন্নদাবাবুর বাড়ী গেল। সিড়িতে হঠাৎ হেমনলিনীর সঙ্গে দেখা হইল । অন্তদিন হইলে এরূপ সাক্ষণতে একটু-কিছু অংলাপ হইত। আজ হেমনলিনীর মুখ লাল হইয়া উঠিল,—সেই রক্তিমার মধ্য দিয়া একটা হাসির সাভা উষার অালোকের মত দীপ্তি পাইল-হেলনলিনী মুখ ফিরাইয়া চোখ নীচু করিয়া দ্রুতবেগে চলিয়া গেল । হেমনলিনীর এই লজ্জিত আনন্দের নীরব রশ্মি-অভিঘাতে রমেশের সমস্ত হৃদয় পুলকে কাপিতে লাগিল।