পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రి)e প্রয়োজন নাই, তাহারো মুল্য আছে—হীরামুক্তার আবশুকত অল্প, কিন্তু তাহার মূল্য অল্প নহে, তাহা হাতে পাইয়া ফেলিয়া দিতে ইচ্ছা করে না । রমেশকে এই মুহূর্তে যদি তাহার অদৃষ্ট আসিয়া বলে, “বাপু, কমলাকে লইয়। তুমি বড়ই মুস্কিলে পড়িয়াছ, এক কাজ করা যাক, ইহাকে তোমার সংসার হইতে একেবারে সুদূরে সরাইস্ক দিয়া তোমাকে জটিল সঙ্কট হইতে উদ্ধার করি।” তবে রুমেশ বোধ হয় এই উত্তর করে—-“জটিলতাটা কাটিয়া যাওয়া নিতান্তই দরকার, কিন্তু কোন উপায়ে কমলা যদি থাকিয়া যায় ত থাকু না ! ও বেচার মৃত্যুর মুখ হইতে ভাসিয়া আমার কাছে আসিয়া ঠেকিয়াছে—আমি উহাকে প্রাণ দিয়াছি, এ সংসারে আমার কাছে ও কি আশ্রয় পাইবে না ?” রমেশ জানিত, কমলার অদৃষ্টে নারীজীবনের প্রধান সুখটা নাই—কিন্তু শিক্ষার দ্বারা, স্নেহের দ্বারা ইহার হৃদয়মনকে বিকশিত, করিয়া তুলিবার ভার আজ কাহার উপরে পড়িয়াছে ? ঘটনাগুলি এম্‌নি করিয়া ঘটিয়াছে যে, সেই কৰ্ত্তব্য একমাত্র রমেশেরই ৷ নিজের স্বথের জন্ত, মুবিধার জন্য এই কৰ্ত্তব্য রমেশ ফেলিয়া দিতে পারে না । রমেশ আর-একবার কমলার মুখের দিকে চাহিয়া দেখিল । কমলা তখন ঈষৎ মুখ নত করিয়া তাহার ইংরাজিশিক্ষার বহি হইতে ছবি দেখিতেছিল । সুন্দর মুখ সোনার কাঠির মত নিজের চারিদিকের স্বপ্ত সৌন্দৰ্য্যকে জাগাইয়া তোলে। শরতের আলোক হঠাৎ ষেন প্রাণ পাইল, আশ্বিনের বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, কাৰ্ত্তিক । দিন যেন আকার ধারণ করিল—একটি তরুণ সুকুমার লাবণ্যে চারিদিকের আকাশ যেন ঢলঢল করিতে লাগিল । কেন্দ্র যেমন তাহার পরিধিকে নিয়মিত করে—তেমনি এই মেয়েটি আকাশকে, বাতাসকে, আলোককে আপনার চারিদিকে যেন বিশেষভাবে আকর্যণ করিয়া আনিল—যে স্বরগুলি.বিচ্ছিল্প, তাহাতে যেন একটি বিশেষ রাগিণী সঞ্চার করিল—যে কথাগুলি বিক্ষিপ্ত, তাহাকে যেন বিশেষ অর্থে ও ছন্দে স্বপরিণত করিয়া তুলিল । অথচ সে নিজে ইহার কিছুই ন৷ জানিয়া চুপ করিয়া বসিয়া তাহার পড়িবার বইয়ের ছবি দেখিতেছিল । রমেশ মনে মনে ভাবিতে লাগিল, “হেমনলিনীকে লইয়া রমেশ যে সংসার পাতিয়া বসিবে, কমলার এই কিশোর-কোমল কান্তি তাহার উপরে একটি বৈচিত্র্যপাত করিবে । এই সৌন্দর্য্যের প্রতিমা, এই স্নেহের পুতলী, রমেশ ও হেমনলিনীর ভালবাসার মাঝখানে আরো একটি বিশেষ রসসঞ্চার করিয়া দিবে —ইহার মাধুৰ্য্য তাহাদের প্রেমের মাধুরীর মধ্যে আরো একটি রঙীন রশ্মি বিকীর্ণ করিবে । তাহাদের প্রেমের উপরে চন্দ্র যেমন বিশেষভাবে আলো দিবে, বসন্তের ফুল যেমন বিশেষভাবে গন্ধ মিলাইবে, এই মেয়েটিও তেমনি ইহার বিকচোমুখ নবীন জীবনের নব নব বিকাশবৈচিত্র্য তাহীদের প্রেমের সহিত মিশ্রিত করিতে থাকিবে । এইরূপে রমেশ একবার কমলার নিজের দিক হইতে, একবার আপনাদের. সৰ্ব্বগ্রাসী ভালবাসার দিক্ হইতে কমলাকে অবিচ্ছেস্তভাবে নিজেদের আত্মীয় করিয়া দেখিল ।