পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, মাঘ । কলেজে পড়িবার সময় ছাত্রমণ্ডলীর নিকট শেকৃম্পায়রের কি দুৰ্নিবার প্রতাপ ছিল— বাল্মীকি-কালিদাস প্রভূতিকে উড়াইয়া-দিয়া শেকৃম্পীয়রকে সাহিত্যজগতের মুকুটমধ্যমণি করিয়া রাখিতাম ; কিন্তু এখন তাহার প্রতি হৃদয়ের প্রগাঢ় পূজার ভাব বিচু্যত না হুইলে ও মন যেন ক্রমশই হিন্দু আদশের সৌন্দর্য্যে বেশী আকৃষ্ট হইতেছে, সেই সকল কবিতা ও নাটকে আর পুর্বলব্ধ আনন্দ ও আশ্রয় পাই না । মনে হয়, পাশ্চাত্য জগতের মন বড় কঠোর,—উহাতে নিয়ত স্পৰ্দ্ধা, ভয়াকাজক্ষ ও অহঙ্কারবুদ্ধি একটা কঠিন ও দুর্ভেদ্য আবরণ রচনা করিয়া রাখিয়াছে ; নাটক ও কবিতা হইতে উহা শেলের মত তীক্ষাগ্র এমন একটা অস্ত্র চায়, যাহা হৃদরের কর্কশ বাহ ত্বকৃটাকে ছেদন করিয়া তীব্র আঘাত সহকারে অস্তর্নিহিত রসের উৎসটা আবিষ্কৃত করিয়া দিতে পারে। ভীষণ সংঘর্ষ, তীব্র বাক্য, জালাময় ও হৃদয়ভেদী বিয়োগান্ত পরিসমাপ্তি তাহীদের হৃদয়ের করুণা জাগাইতে সমর্থ— স্বতরাং তাহীদের কবিরা ও নাটক ও কবিতায় নিরবধি সেইরূপ সামগ্রীই দিতেছেন । ইহঁtদের কবিতা দুঃখকে মূৰ্ত্তিমান করিয়া উহার হস্তে অন্তর্দাহের প্রজলিত মশাল দিয়া বরণ করিয়া আনে,—তবে যদি একটুকু কারুণ্য জন্মে। শুধু করুণা জাগাইবার জন্ত, মনকে দ্রব করিবার উদেখে ইহার দুঃখের চিত্র আনিয়া উপস্থিত করেন । যে অস্তঃকরণে বেদনাবোধ লুপ্ত হইয়াছে, সেই অস্তঃকরণে বেদন জাগাইবার জন্ত বিষ প্রক্রিয়ার স্থায় ইহার উৎকট দুঃখের চিত্র খুজিয়া ৰেড়ান । আমাদের ঠিক তাহার বিপরীত । আহস্কার, স্পৰ্দ্ধ প্রভৃতি রাজসিক বৃত্তি অপেক্ষ আমাদের প্রাচীন কবিগণ সাত্ত্বিকগুণের মহিমা অধিক বুঝিয়াছিলেন । আমাদের দেশের লোক হৃদয় স্বভাবতই গার্হস্থ্যধৰ্ম্মে দীক্ষিত—সংযম ও আত্মসংবরণে দক্ষ, শীলতাপ্রিয় এবং অতিশয় কোমল । এই কোমলতা এত বেণী মে, ইহাতে জীবনে আমাদিগকে অকৰ্ম্মণ্য করিয়া ফেলে। ছেলের জন্ত, স্ত্রীর জন্ত, ভাই-ভগিনীর জন্ত আমাদের স্নেহস্কি হৃদয়ে এত বাপা যে, জীবনসংগ্রামের পক্ষে আমরা অকৰ্ম্মণ্য হইয়া পড়িতেছি ;—এই স্নেহভারঃক্রান্ত হৃদয় শোক ও মমতায় একান্ত পীড়িত হইয় যে ঔষধ খুজিয়া পাইয়াছিল, তাহার নাম মারা বাদ । সংসারের মমতাগুলি স্নিগ্ধলতার স্তায় আমাদের প। বাধিয়া ফেলিমাছে, আমাদের নড়িবার সাধ্য নাই, তাই আমাদের সব্বদ। বলিতে হয়—দারা পুত্র কেউ কিছু নয় । এই সতর্কতার দ্বারা আমরা পায়ের নিগড় ছিড়িতে চাই—আমাদের কোমল হৃদয়ে বল সঞ্চারের প্রয়fস পাই । আমরা ব্যথিত, এইজন্ত ব্যথাকে বড় ভয় করি। সংসারে যে সকল ঘটনা ঘটে, তাহ অশুভ হইলে আমরা জন্মান্তরীণ কৰ্ম্মফল ও লোকচরিত্র সম্বন্ধে অনভিজ্ঞতা প্রভৃতির কল্পনা করিয়া মনকে আশ্বাস দিষ্ট,— ঈশ্বরের বিধান সৰ্ব্বত্রই - শুভ । কিন্তু সাহিত্যে সকল বিষয়কেই কবি চক্ষর সম্মুখে পরিস্ফুট করিয়া দেখাইয়া থাকেন। সেখানে কৰ্ম্ম ও কৰ্ম্মের ফল এবং বর্ণিত চরিত্রসকলের সমস্ত স্বল্প ভাব আমাদের প্রত্যক্ষ হইয়া থাকে—সেখানে তাগুভপরিসমাপ্তি আমাদের