পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৪৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8રક્ત বিষহরি ও চণ্ডীর সেবকদিগের কাগরও ত অন্নবক্সের কষ্ট দেখি না। আর তোমার চালে খড় নাই।” শ্ৰীধর কহিলেন ‘রত্নময় প্রাসাদে রাজা যেরূপ কাগাতিপাত করেন, বৃক্ষশাখায় পক্ষিগণও সেইরূপেই সময়াতিবাহিত করিয়া থাকে।. কাল সকলের পক্ষেই সমান। সকলেই ভগবানের ইচ্ছায় নিজকৰ্ম্মফল ভোগ করে ।’ নিমাই তখন কহিগেন "শ্ৰীধর, কে বলে তুমি দরিদ্র, তুমি অপৰ্য্যাপ্ত ধনের অধিকারী, লুকাইয়। ধন ভোগ কর । একদিন আমি সব প্রকাশ করিয়া দিব।” শ্রীধর উত্তর করিলেন “পণ্ডিত, তোমার সহিত আমার দ্বন্দ সাজে না, তুমি ঘরে যাও।” নিমাই কহিলেন “সহজে তোমাকে ছাড়িব ? আগে কি দিবে বল ? তখন— শ্ৰীধর বলেন, আমি খোলা বেচি খাই। ইহাতে কি দিব, তাহা বলহ গোসাঞি ॥ প্রভু বোলেন— যে তোমার পোত ধণ আছে । সে থাকুক এখনে, পাইব তাহ পাছে ॥ এবে কলা মূল থোড় দেহ কড়ি বিনে । দিলে আমি কেন্দিগ না করি তোমা সনে শ্ৰীধর তখন ভাবিলেন “উদ্ধত ব্রাহ্মণ যদি আমাকে প্রহার করে, তাহা হইলেও কিছু করিতে পারি না। ছলেই হউক বলেই হউক তবু যে ব্রাহ্মণে লইতেছে ইহা আমার ভাগ্য, ইহা ভাবিয়া নিমাইকে থোড়, কলা, মুলা, খোলা দিয়া শ্ৰীধর কহিলেন “লও ঠাকুর আর আমার সহিত কোন্দল করিও না।” তখন নিমাই কহিলেন “শ্ৰীধর আমাকে কি মনে কর ?” বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, কাত্তিক, ১৩১; শ্ৰীধর উত্তর করিলেন ব্রাহ্মণ, বিষ্ণুর জান না—আমি গোয়ালার ছেলে। তোমার গঙ্গার মহত্ব আমা হইতেই ।” ঐধর হতবুদ্ধি হইয়া কহিলেন “নিমাই পণ্ডিত, গঙ্গাকেও কি তুমি ভয় কর না। বয়োবৃদ্ধির সহিত কোথায় লোক স্থির গম্ভীর হয়, আর তোমার চপলত দিন দিনই বৃদ্ধি পাইতেছে।” শ্ৰীধরের সহিত কৌতুক করিয়৷ নিমাই গৃহে ফিরিয়া আসিলেন এবং সন্ধ্যাকালে চন্দ্রলোকপ্লাবিত আকাশতলে বিষ্ণুমন্দিরের দ্বারে গিয়; উপবেশন করিলেন । তখন এক অপূৰ্ব্ব মুরলীধ্বনি উত্থিত হইয়। আকাশমণ্ডল পরিপূরিত করিল। সেই ত্রিভুবনমোহন বংশীরবে শচীদেবী আনন্দে মূৰ্ছিত হইয়া পড়িলেন। চৈতন্তলাভ করিয়া শচী বৃঝিতে পারিলেন,যথায় নিমাই উপবিষ্ট তথা হইতে মুরগীরব উত্থিত হইতেছে ; গৃহবাহিরে আসিয়া দেখিলেন, পুত্র বিষ্ণুমন্দিরের স্বারে উপবিষ্ট, কিন্তু বংশীনাদ আর শোনা গেল না। শচী বিক্ষিত হুইয়া কত কি ভাবিতে লাগিলেন। ইহার পরেও কত দিন নিশাভাগে নৃত্যগীতধ্বনি শুনিয়া শচী চমকিত হইয়াছেন । কিন্তু কাহাকেও দেখিতে পান নাই ; কত নি দেখিয়াছেন, হঠাৎ সমগ্র গৃহ জ্যোতিৰ্ম্ময় হইয়া উঠিয়াছে, কারণ খুজিয়া পান নাই। “এই সময়ে কেশব কাশ্মিরী নামক এক দ্বিগ্বিজয়ী পণ্ডিত নবদ্বীপে • সমাগত হইলেন । তিনি ভারতবর্ষের নানাস্থানের পণ্ডিতগণকে তর্কযুদ্ধে পরাস্ত করিয়া