পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3 ) به মধুরিপুরহমিতি ভাবনশীল। ইহাই বিদ্যাপতির পদাবলীতে অন্য আকারে ঐরাধার দিব্যোন্মাদ বর্ণনে প্রকটিত झ३झttछ। অমুক্ষণ মাধব মাধব সোঙরিতে মুখামুখি তেল মধাই। কি অপূৰ্ব্ব সেই দিব্যোন্মাদ ! এমন অবস্থায় উন্নীত হইবার জন্ত মনের কত একনিষ্ঠত, চিন্তার কত প্রগাঢ়তা, কত অন্তলীনতার প্রয়োজন তাহ ভাবিয়া দেখিবার বিষয় নহে কি ? . শ্লিষাতি চুম্বতি জলধর-কল্পৰ্ম্ম । হরিরুপগত ইতি তিমিরমনল্পম্ ॥ এই শ্লোকের ভাব আধ্যাত্মিকতায় উন্নীত হইয়াছে, ঐরাধার জগন্ময় শ্ৰীকৃষ্ণমূৰ্ত্তি হইতেছে । ভক্তি-সাহিত্যে বোধ হয় শ্ৰীজয়দেব প্রথমে বিরহের চিন্তাকে এমনি করিয়া আধ্যাত্মিকভাবে ব্যক্ত করিয়াছেন। এই ভাবে ক্রমে বৈষ্ণব ভক্তগণ ভাবুক হইয়াছিলেন—বঙ্গের প্রথম ও প্রধান বৈষ্ণব কবি এই ভাব লইয়া তাহার রাধার চিত্র আঁকিয়াছিলেন । তাই বলিয়াছি ষে শ্ৰীজয়দেবের কাছে বৈষ্ণব কবি মাত্রেই মহাঋণে আবদ্ধ। বিদ্যাপতির তো কথাই নাই। বিদ্যাপতি শ্ৰীজয়দেব কবির ভাবে পূর্ণমাত্রায় অনুপ্রাণিত। তাহার পূর্বরাগই বল, মিলনই বল, মানই বল, বিরহই বল, সম্ভোগই বল—সৰ্ব্বত্রই মহাকবি জয়দেবের প্রভাব স্পষ্ট । কোথাও তিনি ভাবের, কোথাও বা বর্ণনার, কোথাও বা ভাষার, কোথাও বা ছন্দের ঋণ গ্রহণ করিয়া নিজ সদয়গ্রাহী বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, ফাল্গুন, ১৩১৯ পদাবলী রচনা করিয়া নাব জয়দেব উপাধি অর্জন করিয়াছেন । তবে জয়দেবের শ্রীরাধার ও বিদ্যাপতির শ্রীরাধার চরিত্রগত কিছু পার্থক্য আছে। এ পার্থক্য যদিও চরিত্রের প্রকৃতিগত নহে, তথাপি অনুভবনীয় বটে। আমরা দেখিতে পাই যে দুইজনেই প্রেমিকা— দুইজনেই লালসাময়ী, দুইজনেই কৃষ্ণগতপ্রাণী ; কিন্তু বিদ্যাপতির রাধিক সরলা বালিক1, ক্রীড়াময়ী, চঞ্চল, তরলা লজ্জালুলিত । জয়দেবের রাধিকার চঞ্চলত বা তরলতা নাই, তিনি গভীর লালসাময়ী, অপার প্রেমমরী, অনন্তচিন্তারহিতা ; তাহাকে আমরা যখন প্রথম দেখিতে পাই তখনই তিনি কৃষ্ণপ্রেমে উন্মাদিনী, তাহার কৃষ্ণসঙ্গ ভিন্ন সুখ নাই, কৃষ্ণসঙ্গ ভিন্ন জীবনের কোনও সার্থকতা নাই, তাহার লুকোচুরি নাই, ভাবগোপনের চেষ্টা নাই, তাহার জগৎ নাই, বিশ্ব নাই, আছে এক শ্রীকৃষ্ণসঙ্গা কাজক্ষা, শ্ৰীকৃষ্ণরসাস্বাদন-পিপাসা ; ফলে শ্রীকৃষ্ণ ভিন্ন ত্ৰিজগতে তাহার আর কিছুই নাই। তাছার বিরহ, তাহার মান, র্তাহীর সত্তোগ, তাহায় প্রগল ভতা, তাহার আদর-আবদার সকলই সেই পীতাম্বরকে অবলম্বন করিয়া। তাহার প্রেমের এই প্রগাঢ়তাই শ্ৰীজয়দেব কবির বৈষ্ণবকুলকে প্রধান দান ও সেই জন্যই বৈষ্ণব কবিকুল তাহাকে মাথায় ধরিয়া রাখিয়াছেন ও রাখিধেন তিনি রাধাকৃষ্ণের মিলনের কবি-রাধাকৃষ্ণের সন্তোগের কবি—তিনি মনের কবি—তিনি দেহের কবি, কারণ বৈষ্ণব জানে যে সৰ্ব্বেন্দ্রিয় দ্বারা কৃষ্ণসেবাই